'স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক'
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে ব্যাংকিং খাতে অনাদায়ী বা মন্দ ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২শ ৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরাসরি খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৫ লাখ ৬শ ৩৩ কোটি টাকা। আর ২০১২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২ হাজার ৭শ ১৫ কোটি টাকা। এর সঙ্গে পুনঃ তফসিলি ঋণসহ খারাপ ঋণ যোগ করলে তার পরিমাণ ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯শ ২২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে অর্থ ঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫শ ৪৩টি মামলার বিপরীতে অনাদায়ী ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। সব মিলে মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানী একটি হোটেলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে এক সেমিনারে
মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য উঠে আসে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির আয়োজনে সেমিনারে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
ব্যাংকের সুশাসন প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে। স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আমরা দেখতে পারছি না। বাংলাদেশে ব্যাংকের বাইরেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাংকিং ডিভিশনের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা দেখতে পাচ্ছি। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা, সেটি পারছে না।’
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন আরো বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পরও ব্যাংকিং খাতের প্রসার ঘটেছে। আমরা শুধু ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা করি, নন-ব্যাংকিং খাতেরও সমস্যা কম নয়। ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্যের অন্যতম মূল নিয়ামক হচ্ছে খেলাপি ঋণ। সেটির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। এ খাতে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অনেকখানি ক্ষরণ ঘটেছে। সেই ক্ষরণের কারণে ব্যাংকিং খাত এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।’
তিনি জানান, বাংলাদেশে ব্যাংকিং পারফর্মেন্স বিষয়টি বিদেশিরা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। তারা সময় সময় এ বিষয়ে রেটিং করে থাকে। সর্বশেষ বি-১ র্যাটিং এর থেকে বিদেশিরা তাদের আউটলুক রেটিং আরও কমিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, 'খেলাপি ঋণের পরিমাণ রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও বাড়ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের যে আইনি কাঠামো দরকার, সেটি না থাকায় এ সংক্রান্ত মামলাগুলো সহজে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। যথেষ্ট বিচারক নেই সেখানে।'
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন। তিনি
বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর সমস্ত তথ্য জনসন্মুখে প্রকাশ পাচ্ছে না। যারা প্রকাশ করে না, তারা লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। যতটুকু প্রকাশিত হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে তথ্যের দরজা ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া। আমরা তথ্যের জন্য মিডিয়ার ওপরে নির্ভর করতাম, সেটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তথ্যের অভাবের কারণে ভুল নীতি গৃহীত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের এই অবস্থা থেকে যদি টেনে তুলতে হয়ে, তাহলে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মানে শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সকালে এক রকম নিয়ম করে, বিকেলে আবার আরেকজনের কথা শুনে তা পরিবর্তন করে। আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্বশাসন দেওয়া আছে। তা অর্জন করতে হবে।’