ইবিতে 'বড় ভাইয়ের' পিটুনিতে রক্তাক্ত জুনিয়র

ইবিতে 'বড় ভাইয়ের' পিটুনিতে রক্তাক্ত জুনিয়র

ইবি প্রতিনিধি: 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পূর্বঘটনার জের ধরে জুনিয়রকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে সিনিয়রসহ কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝালচত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।


ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান উৎস, রিয়াজ উদ্দিন এবং বাদশা। তারা সকলেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 


অভিযোগসূত্র অনুযায়ী অভিযুক্তরা হলেন সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম নাঈম, একই বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ তালুকদার, ইংরেজি বিভাগের মাসুদ রানা, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ওলিউল ইসলাম ও আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশান। 


প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২২ নভেম্বর বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে ক্যাম্পাসের মফিজ লেকে চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই সময় ভুক্তভোগী উৎস ভুলক্রমে অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের জন্য আনা একটি ওয়ানটাইম প্লেট ভেঙে ফেলেন। পরে এটা নিয়ে অভিযুক্ত নাঈম ও মারুফসহ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে অন্যান্যরা উৎসসহ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সবাইকে গালমন্দ ও অপমান করতে থাকেন। তখন উৎসসহ তার সহপাঠীরা এর প্রতিবাদ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। মারামারির সময় উভয়পক্ষ একে অন্যদের দিকে প্লাস্টিকের চেয়ার ছুড়ে মারেন। এসময় চেয়ারের আঘাতে অভিযুক্ত নাঈম গুরুতর আহত হন এবং ভুক্তভোগীদের কয়েকজন সহপাঠীর হাত কেটে যায়। পরে শাখা ছাত্রলীগের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মাঝে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়। 


এ ঘটনার জের ধরেই আজ দুপুরে ভুক্তভোগীরা বিভাগ থেকে পরীক্ষা শেষে ঝালচত্ত্বরে গেলে মূল অভিযুক্ত নাঈম ও মারুফের নেতৃত্বে মাসুদ, নিশান, তওহীদ, ওলিসহ ১০-১৫ জন কাঠের বাটাম ও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালান। এসময় ভুক্তভোগীদের এলোপাতাড়ি মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। মারধরে ভুক্তভোগী উৎস তার কপাল ও পিঠে জখমসহ চোখে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তার বন্ধুরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে আহত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান। 


এ বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম বলেন, চোখে আঘাতের ফলে ভেতরে কিছুটা রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেটা খুব বেশি গুরুতর নয়। ব্যাথার ঔষধ, চোখের ড্রপসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধ লিখে দিয়েছি। এগুলো অনুযায়ী চললে ভালো হয়ে যাবে। এবং এক সপ্তাহ পর তাকে আবার দেখা করতে বলেছি। 

 

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম নাঈম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম না। 


আরেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, আমি ওখানে মারামারি করতে যাইনি। ওখানে মারামারি হচ্ছে দেখে আমি তাদের থামাতে গিয়েছিলাম।


এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান উৎস বলেন, পরীক্ষা শেষ করে ঝালচত্বরে যাওয়ার সময় আমিসহ আমার বন্ধুদের উপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে অতর্কিত হামলা করে। এতে আমার চোখ ও কপালে গুরুতর আঘাত পাই। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার চাই। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ঘটনাটি নিয়ে বিভাগের সাথে যোগাযোগ হয়েছে তারা একটি দিন সময় চেয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল বিভাগ ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে। বিভাগ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে আমরা দেখব।