বগুড়ায় স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ বাড়ছে যুবকদের
বগুড়ায় স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ বাড়ছে যুবকদের। তাদেরই একজন সফল চাষি নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের মনিনাগ গ্রামের আলামিন হোসেন। তিনি স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। এসএসসি পাসের পর থেকে তিনি ভালোভাবে স্ট্রবেরি চাষে মনোযোগী হয়েছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি এ বছর ১ বিঘা জমিতে ফেস্টিবল জাতের স্ট্রবেরি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি আলামিন।
জানা যায়, বগুড়া সদর উপজেলা, নন্দীগ্রাম, শেরপুর, শাজাহানপুরসহ অন্যান্য উপজেলায় চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের শিক্ষিত যুবকরা। এতে অল্প পুঁজি, অল্প শ্রমে লাভ অনেক বেশি। অল্প দিনেই সফলতার মুখ দেখছেন তারা। দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও প্রান্তিক কৃষকের কল্যাণে এখন স্ট্রবেরি সবার মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিনিয়ত কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ।
তবে অনেকে শখে বাড়ির টবে বা ছাদ কৃষিতে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেছেন বগুড়ার জেলার অনেক কৃষক। এমনি একজন জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার আলামিন। পরিবারের আর্থিক সমস্যার কারণে কোনোমত এসএসসি পাস করে কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী স্ট্রবেরি চাষের সিদ্ধান্ত নেন। শুধু স্ট্রবেরিতেই থেমে নেই, মালচিং পদ্ধতিতে শসা, লতি কচু, পিঁয়াজ, রসুনসহ পুষ্টি বাগানও করেছেন। এসব করে তিনি সফলতাও পেয়েছেন। আলামিন প্রথমবার এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করে বাজিমাত সৃষ্টি করেছে।
আলামিন হোসেন জানান, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে বেশি একটা পড়াশোনা করতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে নিজ জমিতে শুরু করেন কৃষি কাজ। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বিভিন্ন সময় কৃষির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনের পরামর্শ অনুযায়ী ১ বিঘা জমিতে ফেস্টিবল জাতের স্ট্রবেরির চাষ করেন। স্ট্রবেরি চাষে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার স্ট্রবেরি বিক্রয় করেছেন। একদিন পর পর ফল সংগ্রহ করা যায়। বাজারে স্ট্রবেরির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে স্ট্রবেরি বিক্রয় হচ্ছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে শেষ পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করে লাভবান হওয়া যাবে।
তিনি আরও জানান, ভাদ্র মাসের প্রথমদিকে স্ট্রবেরি চাষ শুরু হয়। পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে ৫ থেকে ৬টি চাষে মাটি ঝরঝরে করতে হয়। তারপর সার, গোবর ও ক্যালসিয়ামের অন্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। মৌসুমের শুরুতে স্ট্রবেরির সাদা ফুল ফোটে। পরে হলুদ রঙের ফল ধরে। সবশেষে পাকা লাল টুকটুকে রং ধারণ করে। ফেস্টিবল জাতের একটি চারা গাছ থেকে মৌসুমে কমপক্ষে ২ থেকে আড়াই কেজি ফল পাওয়া যায়।
নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ গাজিউল হক জানান, স্ট্রবেরিতে উচ্চমাত্রায় পুষ্টিমান বিদ্যমান। এ ফল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগমুক্তিতেও সহায়তা করে। আলামিন হোসেন একজন সাহসী চাষি। প্রথম বার স্ট্রবেরি চাষ করেই বাজিমাত সৃষ্টি করেছেন। কৃষি অফিস থেকে আলামিনকে স্ট্রবেরি চাষে সবসময় বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। বাজারে এর অনেক চাহিদা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে স্ট্রবেরি বিক্রয় করে অনেক লাভবান হতে পারবেন আলামিন।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় স্ট্রবেরি ফলের রস, জ্যাম, আইসক্রিম, মিল্ক শেকসহ শিল্পায়িত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ১৭৪০ সালে ফ্রান্সে প্রথম স্ট্রবেরির চাষ শুরু হয়। পরে চিলি, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে স্ট্রবেরি চাষ। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি, সেসব এলাকায় বিভিন্ন জাতের স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। অনেকে শখে বাড়ির টবে বা ছাদ কৃষিতে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন