র‍্যাগিং ও ভাংচুরের দায়ে ইবির ছাত্রলীগ কর্মীসহ পাঁচজন বহিষ্কার

র‍্যাগিং ও ভাংচুরের দায়ে ইবির ছাত্রলীগ কর্মীসহ পাঁচজন বহিষ্কার

ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) চিকিৎসা কেন্দ্র  ভাঙচুর ও নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় একজনকে স্থায়ী এবং অপর ঘটনায় পাঁচ অভিযুক্তকে এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।


মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান সাক্ষরিত পৃথক ছয়টি আলাদা অফিস আদেশে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।


চিকিৎসা কেন্দ্র ভাঙচুরের ঘটনায় স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী রেজোয়ান সিদ্দিকী কাব্য। অন্যদিকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ইমন, হিশাম নাজির শুভ, শাহরিয়ার পুলক, সাদমান সাকিব আকিব ও শেখ সালাউদ্দীন সাকিব। 


অফিস আদেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে ভাংচুরের ঘটনায় রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্যকে গত ৫ নভেম্বর মৌখিক শুনানীর জন্য ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হননি। পরে ১৯ ডিসেম্বর ছাত্র-শৃঙখলা কমিটির ১২তম সভায় তার অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং মৌখিক শুনানীতে অনুপস্থিতির আলোকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং ৫ নভেম্বরের মৌখিক শুনানীর আলোকে বাকী পাঁচ শিক্ষার্থীকে ১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়।


জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর দফায় দফায় হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠে একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ইমন, শাহরিয়ার পুলক, হিশাম নাজির শুভ, সাদমান সাকিব আকিব, ও শেখ সালাউদ্দীন সাকিবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ জানিয়ে একটি মেইল করেন। পরে ৯ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে ছেলেকে দিয়ে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 


এর আগে গত ১০জুলাই মাদকাসক্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরী বিভাগে ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের মারধর এবং কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ উঠে আইন বিভাগের ছাত্র রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য, সালমান আজিজ ও আতিক আরমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিনকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


পরবর্তীতে গত ৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের

ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপরোক্ত দুই তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করে ৮ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে তিনজনকে স্থায়ী এবং তিনজনকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এবং বাকি দুইজনকে শেষবারের জন্য সতর্ক করা হয়। কিন্তু স্থায়ী বহিষ্কারের প্রতিবাদে অভিযুক্তদের সহপাঠীরা প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তার কয়েকঘন্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছয় জনকেই সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।