বাগেরহাটের কাঠের বাইক রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে

বাগেরহাটের কাঠের বাইক রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে

বাগেরহাটের বিসিক শিল্পনগরীতে তৈরি হচ্ছে কাঠের ‘বেবি ব্যালেন্স বাইক’, আর তা রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন বলে মনে করেন উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ন্যাচারাল ফাইবার।

মোস্তাফিজ আহমেদ জানান, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে গ্রিস ও বেলজিয়াম থেকে তিন লাখ বেবি ব্যালেন্স বাইকের অর্ডার পান তিনি। এরপর দেশি কাঠ দিয়ে পরিবেশবান্ধব এই বাইক তৈরি শুরু করেন। তিনি বলেন, তারা সচরাচর নারকেলের ছোবড়া দিয়ে পণ্য তৈরি করতেন। সম্প্রতি ইউরোপের কিছু কাস্টমার পেয়েছেন, যারা কাঠের কিছু পণ্য নিতে চান। এরপর তারা কাঠের বেবি ব্যালেন্স বাইকের অর্ডার পান বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘এই বাইক সাপ্লাই করে ভিয়েতনাম আর চীন। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমরা কিছু স্যাম্পল ঠিক করি। আমরা কিছু প্রোডাক্ট দিয়েছি। তারা খুব খুশি হয়েছে। প্রথমবারের মতো অর্ডার পেয়ে ইতোমধ্যেই ২০ হাজার পাঠিয়েছি।’ তিন লাখের মধ্যে এ বছর তারা ৪০ হাজার দিতে পারবেন বলে জানান।

সরেজমিনে বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর ন্যাচারাল ফাইবারে গিয়ে দেখা যায়, কারখানায় বাইক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। কেউ তৈরি করছেন চাকা, কেউ তৈরি করছেন হ্যান্ডল, আবার কেউ তৈরি করছেন সাইকেলের ফ্রেম। সবশেষে শ্রমিকরা কাঠের বাইকে নানার রঙ ও পালিশ করছেন।

কর্মরত রুহুল আমিন নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা সাধারণত দেশীয় কাঠ দিয়ে সাইকেলগুলো তৈরি করে থাকি। যেমন আকাশমনি, মেহগনি, গামারিসহ বিভিন্ন ভালো মানের কাঠ দিয়ে বিদেশি শিশুদের জন্য বেবি ব্যালেন্স বাইক তৈরি করি।’

কারখানার অপর নারী শ্রমিক পূজা রানী বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ডিউটি, এরপর দুই ঘণ্টা ওভার টাইম করে সাড়ে আট হাজার টাকা পাই। তাতে সংসার চলে যায়।’

সজীব খান নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘ছয় মাস ধরে এই কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। প্রতিদিন এই কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে প্রায় ৩০টি বাইক।’ তন্নী আক্তার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘এখানে কাজ করে যে বেতন পাই তাতে আমার সংসার এবং ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলে। আগে অনেক কষ্টে দিন চলত। এখন অনেক ভালো আছি।’

উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ তার প্রতিষ্ঠানকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে চান। তিনি বলেন, ‘রপ্তানির জন্য আমাদের সরকার আগে ১০ শতাংশ প্রণোদনা দিত। সম্প্রতি কমিয়ে দিয়েছে। প্রণোদনা কমিয়ে দিলে মার্কেটে টিকে থাকা মুশকিল হবে। সরকারের আন্তরিকতা থাকলে আমাদের প্রোডাক্ট মার্কেটে টিকে থাকবে।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বাগেরহাটের উপব্যবস্থাপক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের পণ্য বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম বাড়ে। দেশীয় পণ্যে বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।Source: protidinerbangladesh