ফার্নিচার বিক্রয়কর্মী থেকে যেভাবে ইন্দোনেশিয়ার কিং মেকার উইদোদো
জোকো উইদোদো ছিলেন জনগণের জন্য। এজন্য ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে ডান বামে তাকাতে হয়নি। ফলে ওই নির্বাচনে সহজেই জয় পান তিনি।
জোকো উইদোদো ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে একেবারে সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে উঠে আসেন। তিনি রাজনীতি এবং সামরিক বাহিনী গোষ্ঠীর বাইরের লোক ছিলেন। যখন ইন্দোনেশিয়ানরা দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন তখন ত্রাণকর্তা হিসেবে আর্বিভূত হন জোকো। তাদের সমস্যা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি যখন প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন তখন টাইম ম্যাগাজিন তাকে ‘ইন্দোনেশিয়ার নতুন গণতন্ত্রের মুখ’ বলে আখ্যায়িত করে।
জোকো উইদোদো দায়িত্ব নেয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার ৬২ বছরের ইতিহাসে জিডিপি ৪৩ শতাংশ অতিক্রম করে এবং অবকাঠামোগত ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
এই নেতা যখন পদত্যাগ করছেন তখনও তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। দেশটির ৭০ শতাংশ মানুষ তাকে এখনও ভালোবাসেন। ইন্দোনেশিয়ার এই কিং মেকার রাজনীতিতে তার উত্তরসূরি রেখে যাচ্ছেন। তার বড় ছেলেকে তিনি সেভাবেই তৈরি করেছেন। যদিও এটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা দুটোই আছে।
১৯৬১ সালে উইদোদো ইন্দোনেশিয়ার সলো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার কাঠ বিক্রি করে জীবনধারণ করত। তারা নদীর ধারে একটি খুপরিতে বসবাত করত। পরে স্থানীয় সরকার কর্তৃক তার পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়।
২০০৫ সালে ইন্দোনেশিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি অব স্ট্রাগল (পিডিআই-পি) হয়ে প্রথম রাজনীতিতে প্রবেশ করেন উইদোদো। ওই বছরই তিনি কেন্দ্রীয় জাভার সলো শহরের মেয়র নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে ২০১২ সালে বিপুল ভোটে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জার্কাতার সরকার নির্বাচিত হন। দারিদ্রতার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এর দুই বছর পরই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপরই তিনি দুর্নীতি বিরুদ্ধে ব্যাপক কঠোরতা আরোপ করেন। অনেক ইন্দোনেশিয়ান মনে করেন তিনি দেশে এক ধরনের বিপ্লব এনেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন এজেন্সির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফারম্যান নুর বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জোকো উইদোদোর স্লোগান ছিল ‘জোকো শুধু আমাদের’। তিনি গতানুগতিক ধারার রাজনীতিবিদ ছিলেন না। প্রত্যেকেই তার কাছে স্বচ্ছ গণতন্ত্রের প্রত্যাশা করেন।
পরবর্তীতে উইদোদোর প্রশাসন বড় ধরনের ধাক্কা খায়, এরপরই তিনি নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছু হটেন।
কয়েক বছর পর তিনি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ইন্দোনেশিয়াকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করান। ১৬টি নতুন এয়ারপোর্ট নির্মাণ, ১৮টি পোর্ট, ৩৬টি ড্যাম এবং ২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করেন। আইএমএফ’র তথ্যানুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পেছনে ফেলবে।
এত কিছুর পরও জোকো সরকারের একটি রাজনৈতিক ট্রেডমার্ক ছিল। যাকে ইন্দোনেশিয়ার ভাষায় ‘ব্লুসুকান’ বলা হয়। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষসহ তাদের দাবি-দাওয়া শোনা হত।
কিন্তু এত কিছু অর্জনের পর একটিমাত্র সিদ্ধান্ত সবকিছুকে ম্লান করে দিয়েছে। কারণ উইদোদো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই মাদকপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অবস্থান নেন। তাদের বিরুদ্ধে তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করেন। ফলে তার ক্ষমতার ছয় মাসের মধ্যে ১৪ জনকে ফাঁসি দেন তিনি। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।
২০১৯ সালে পুনরায় জোকা উইদোদো নির্বাচিত হলে ইসলামি ধর্মগুরু মারুফ আমিনকে সাথী হিসেবে বেঁছে নেন। যা অনেকের কাছে বিতর্কিত মনে হয়। তার দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে বিতর্কিত সাবেক জেনারেল প্রাবোও সুবিয়ানতোকে নিয়োগ। কারণ প্রাবো আগে থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। দেশটির মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এ ঘটনাকে ‘কালো দিন’ বলে ঘোষণা করে।
এমন পরিস্থিতিতে তিনি বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে প্রাবো এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন উইদোদোর বড় ছেলে জিবরান রাকাবুমিং রাকা
যদিও উইদোদো প্রকাশে কাউকে সমর্থন করেনি, তবে প্রাবোর নির্বাচনী প্রচারণায় উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। Source: sharebusiness24.com