ডার্ক চকোলেটের নেপথ্যে আফ্রিকান শিশুদের শৈশব কেড়ে নেয়ার গল্প

ডার্ক চকোলেটের নেপথ্যে আফ্রিকান শিশুদের শৈশব কেড়ে নেয়ার গল্প

বিশ্বজুড়ে সকলের প্রিয় এই মুখরোচক খাদ্য সামগ্রী চকলেট। কিন্তু এর নেপথ্যে রয়েছে শুধুই অন্ধকার। এতটাই যেখানে নিশ্বাস নেয়াও বারণ! সত্যিই তাই! আমাদের আজকের গল্পটা ডার্ক চকোলেটের পেছনে থাকা অন্ধকার জগৎ নিয়ে।

আমার আপনার সন্তানের মুখে ১.৮ মিলিয়ন আফ্রিকান শিশু প্রতিনিয়ত তাদের শৈশব র‍্যাপিং পেপারে মুড়ে ঢেলে দিচ্ছে। আইভরি কোস্ট আর ঘানা; পশ্চিম আফ্রিকার এই দুটো দেশে পৃথিবীর মোট কোকোর ৭০% চাষ করা হয়। কালো মানুষ, কালো মাটি, কালো চকোলেট।

প্রতিদিন হাজার হাজার বাচ্চা পাচার হয়ে যায় মালি, বুরকিনা ফাসো এইসব প্রতিবেশী দেশ থেকে ঘানা, আইভরির কোকো ফার্মগুলোতে। স্কুল, কাজ, ডলারের লোভ দেখিয়ে বা রাস্তা থেকে তুলে আনা হয় বাচ্চাদের। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত অমানুষিক পরিশ্রম করানো হয়। খাদ্য বলতে সস্তা ভুট্টা সেদ্ধ আর কলা। রাতে জানোয়ারের মত জানলা দরজাহীন কাঠের আস্তাবলে ফেলে রাখা হয়। কখনো শিকল দিয়ে বেঁধে। তার মধ্যে যারা পালানোর চেষ্টা করে, তাদের ভাগ্যে থাকে বেধরক মার। মার খেয়ে বা ধর্ষণে মরে গেলে নদীতে বা কুকুরের মুখে ছেড়ে দেওয়া হয় শরীর।

ভয় লাগছে? ঘৃণা লাগছে? আপনার শিশুটির মুখে লেগে থাকা চকোলেটের খয়েরি দাগের দিকে তাকাচ্ছেন? তাহলে আর পড়বেন না। কারণ ‘ইন্টারন্যাশনাল লেবার ল’ এখানে অকেজো। মায়া, ভালোবাসা নেই এখানে। আছে নৃশংসতা, আছে রক্ত। যা শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে আপনার ফ্রিজে রাখা চকোলেটে...!

বিশ্ববিখ্যাত চকোলেট কোম্পানিগুলো যেমন নেসলে, হার্সেস, মার্স এখান থেকে কোকো কেনে। প্রতিযোগিতার বাজারে কোকোর দাম কম রাখার জন্যই শিশু শ্রমিক দরকার। কারণ ৫-১২ বছর বয়সীরা মজুরি পায় না। তার ওপরে তারা কোকো ফিল্ডের দুর্গম জায়গায় যেতে পারে, যেখানে একটু বড়রা ঢুকতে পারবে না। হ্যাঁ, পোকা, সাপ আর বিছের কামড়ে বেশ কিছু বাচ্চা মারা যায়; কিন্তু তাতে মালিকদের কিছু যায় আসে না। দারিদ্র্য থাকবে, বাচ্চার যোগানও থাকবে।

বড় কোম্পানিগুলো চুপ করে থাকে সস্তায় কোকো পাওয়ার জন্য। কোকো ফার্মের শিশু শ্রমিকদের ৪০ শতাংশই মেয়ে। তাদের বয়ঃসন্ধি আসে, যৌবন আসে এই কোকো বাগানেই। এদের অধিকাংশই সারা জীবনে তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারে না। কারণ এখানে আসা সোজা; বেরোনো কঠিন না, বলতে গেলে অসম্ভব। মালিক, ঠিকাদার, সুপারভাইজার, পুলিশ এমনকি মজুরদের যৌনতৃপ্তি মেটায় মেয়েরা। ১১ বছরে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পাল্লা দিয়ে বাড়ে যৌনরোগ। পচে, গলে যায় শৈশব।

কাজের নমুনা? মেছেটে হলো এমন একটি ছুরি, যা চালালে একটা শিশুকে কিমা বানিয়ে দেওয়া যায় কয়েক মিনিটে। বাচ্চাদেরকে মেছেটে ধরিয়ে দেওয়া হয় কোকোবিন পেড়ে সেটাকে বস্তায় পুড়ে ঝাড়াই বাছাই করার জন্য। কারো আঙুল কাটা যায়, কারো গায়ে গভীর ক্ষত। ১০ বছরের বাচ্চাকে ১০০ কেজি ওজনের বস্তা নিয়ে চলতে হয়। একটু বিশ্রামের জন্য চাবুকের বাড়ি পড়ে। এই যুগেই এমন ক্রীতদাস প্রথা চলছে এবং এই অন্ধকার থেকেই বেরোচ্ছে আমার আপনার প্রিয় সুস্বাদু ডার্ক চকোলেট। সুত্রঃ www.daily-bangladesh.com