সবুজে ঘেরা জায়গার কাছাকাছি থাকা শিশুদের ‘হাড় মজবুত হয়’

সবুজে ঘেরা জায়গার কাছাকাছি থাকা শিশুদের ‘হাড় মজবুত হয়’

এক গবেষণায় জানা গেছে, যেসব শিশুর বাড়ির কাছাকাছি সবুজ জায়গা রয়েছে, তাদের হাড় উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়, যা তাদের আজীবন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতেও সাহায্য করে।


বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ২০-২৫ শতাংশের বেশি প্রাকৃতিক এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।


গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই শিশুদের হাড়ের ঘনত্ব খুব কম হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৬৫ শতাংশ কম ছিল।


গবেষকরা বলেন, শৈশব ও কৈশোরে হাড়ের শক্তি বাড়ে। কৈশোরের আগে থেকে প্রায় ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়, তারপর থেকে কমতে থাকে।  


গবেষকেরা আরও বলেন, শিশুদের জন্য সবুজ জায়গার পরিমাণ এবং সবুজ জায়গায় থাকার সুযোগ বাড়ালে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ফ্র্যাকচার ও অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে পারে। 


সবুজ গাছপালা অথবা পার্কের কাছাকাছি বসবাসকারী শিশুদের হাড় মজবুত হওয়ার কারণ হতে পারে তুলনামূলক বেশি শারীরিক কার্যকলাপের বা খেলাধুলা, কারণ এটি হাড়ের বৃদ্ধিতে গতি আনতে সাহায্য করে।


এই গবেষণা দলের অংশ ছিলেন বেলজিয়ামের হ্যাসেল্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টিম নাওরোট ড. হ্যান স্লেয়ার্স। তিনি বলেন, 'শৈশবে হাড়ের ভর যত বেশি শক্তিশালী হয়, পরবর্তী জীবনে আপনি তত শক্তিশালী হবেন। সুতরাং, এই গবেষণার  প্রকৃত জনস্বাস্থ্য বার্তা হচ্ছে, নগর পরিকল্পনাবিদরা শিশুদের হাড়কে শক্তিশালী করতে পারে, যার দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যায়।'


আগের গবেষণায় দেখা গেছে , সবুজ গাছপালায় ঘেরা জায়গাগুলোতে বেশি অবস্থান করলে শিশুদের শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ে। আরও জানা গেছে, শারীরিক কার্যকালাপ বাড়ার ফলে অতিরিক্ত ওজন ও নিম্ন রক্তচাপের ঝুঁকি কমে এবং আইকিউ বাড়ে। পাশাপাশি মানসিক ও আবেগীয় বিকাশ ভালোভাবে হয়।


সবুজে ঘেরা জায়গাগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সাথেও যুক্ত। পার্কে বা অরণ্যে হাঁটাহাঁটির ফলে যুক্তরাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্য খরচ বছরে ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


জামা নেটওয়ার্ক ওপেন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি বেলজিয়ামের ফ্ল্যান্ডার্সের একটি অঞ্চলে ৩০০টিরও বেশি শিশুকে পর্যবেক্ষণ করেছে। এর মধ্যে শহর এবং গ্রামীণ এলাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।  


বিজ্ঞানীরা চার থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করেছিলেন। শিশুর বয়স, ওজন, উচ্চতা, জাতিগত ব্যুৎপত্তি এবং তাদের মায়ের শিক্ষার স্তর বিবেচনায় নিয়েছিলেন।


ফলাফলগুলো দেখায়, যেসব বাচ্চার বাড়ির ১ হাজার মিটারের মধ্যে ২৫ শতাংশ বেশি সবুজ জায়গা রয়েছে, তাদের হাড়ের ঘনত্ব খুব কম হওয়ার ঝুঁকি ৬৬ শতাংশ কম ছিল। গবেষণায় ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। 


গবেষকরা বলেন, অল্প বয়সে হাড়ের বৃদ্ধি কম হলে অস্টিওপরোসিসের সূত্রপাতের ঘটানোর পাশাপাশি বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয়ও বাড়াতে পারে।


স্ক্রিন টাইম, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের দৈনিক ব্যবহারও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল যে এগুলো শিশুদের স্বাথ্য ফলাফলকে প্রভাবিত করে কিনা । কিন্তু কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পাওয়া যায়নি। 


তবে প্রাপ্তবয়স্কদের হাড়ের ঘনত্ব এবং সবুজে ঘেরা জায়গার মধ্যকার সংযোগের ওপর দুটি সাম্প্রতিক গবেষণা পরস্পরবিরোধী ফল পাওয়া গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ৬৬ হাজার মানুষের ওপর করা এক পরীক্ষায় একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক সংযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু হংকংয়ের ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৪ হাজার মানুষের ওপর করা গবেষণায় কোনো  উল্লেখযোগ্য সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। হংকং অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ শহর, সেখানে সবুজের পরিমান খুব কম—সেজন্যই এরকম হতে পারে।