নেকাব ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত ইবির উপ-উপাচার্য

নেকাব ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত ইবির উপ-উপাচার্য

ইবি প্রতিনিধি: 

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ধর্মীয় বিষয়ে আঘাত করার অধিকার কারোই নেই। শিক্ষককে হতে হবে বাবার মতো। তার আচরণ, স্নেহ, ভাষা সবকিছু বাবার মতো হবে। 


পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নেকাব খুলতে আপত্তি করায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক ছাত্রীকে ভাইভা না নেওয়ার প্রতিবাদে এবার মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি হস্তান্তরকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এসব কথা বলেন। 


তিনি আরও বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের বলি তোমারা এখানে একটা পরিবারে এসেছো। এখনে আমরা তোমাদের বাবার মতো।  বাবার সামনে যেভাবে থাকো এখানে সেভাবে থাকবে। কিন্তু আমাদের এখানে কিছু ব্যাত্যয় ঘটেছে, আমাদের আচরণ বাবার মতো হচ্ছে না। তবে এ বিষয়গুলো দেখা হবে, আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলবো। 


মানববন্ধনে দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম, আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জাকারিয়া এবং আল হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন রাহাতসহ অন্য শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। এসময় মানববন্ধনে শতশত শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষক! নিকাবে কিসের আপত্তি?’ ‘ক্যাম্পাসে ধর্ম পালনে স্বাধীনতা চাই।’ ‘পর্দার অধিকার চাই’ ইত্যাদি দাবিসম্বলিত প্রতিবাদী প্লাকার্ড ও ব্যানার প্রদর্শন করেন। 


মানববন্ধনে আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বলেন, নেকাব না খোলার কারণে এক ছাত্রীকে ভাইবা বোর্ডে বসতে দেওয়া হয় নি। বিষয়টি লজ্জার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক ও বাংলাদেশের সংবিধান এবং সার্বজনীন মানবাধিকার বিরোধী। আমরা শিক্ষাগুরুদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই কোন অধিকারে তাকে ভাইবায় বসতে দেওয়া হয় নি। আমারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা দাবি জানাই এরকম পরিস্থিতিতে স্মার্ট ডিভাইস বা নারী শিক্ষকের দ্বারা পরিচয় সনাক্তের ব্যাবস্থা করা হয়। 

 

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি সম্বলিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। ৪ দফা দাবি হল- ন্যাক্কারজনক ও হীন এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্যাম্পাসের সর্বত্র শালীন ‍ও রুচিসম্মত পোশাক পরিধানের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্ব স্ব ধর্মপালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত, পরবর্তীকে যেন কেউ কারো ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার মতো দুঃসাহস না করে তা নিশ্চিত করা। 


উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এক ছাত্রী নেকাব পরে অংশ নেয়। এসময় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য তাকে নেকাব খুলতে বলেন। এসময় ওই ছাত্রী নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ভাইভা বোর্ডে একজন নারী শিক্ষিকা দাবি করলে তার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতের বিষয়ে উপস্থিত শিক্ষকরা অসম্মতি জানান এবং তাকে ভাইভা বোর্ডের সকল সদস্যদের সামনে নেকাব খুলতে বলেন। পরে নেকাব না খোলায় ওই ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাইভা নেয়নি উপস্থিত শিক্ষকরা।