নতুন সংবিধান প্রনয়ণ ও র্যাব বিলুপ্তির দাবি নাবিকের
বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন, নির্বাচনপদ্ধতির সংস্কার, র্যাব বিলুপ্ত করা, পুলিশের সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের দাবি উঠেছে একটি মতবিনিময় সভা থেকে।
আজ রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে ‘নতুন বাংলাদেশে জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানানো হয়। নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক) নামের একটি সংগঠন ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে পরিবর্তন এসেছে, সবার দায়িত্ব এই পরিবর্তনকে ধরে রাখা। এ জন্য ছাত্রদেরই ভ্যানগার্ড (অগ্রদূত) হতে হবে। তিনি বলেন, কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে বসতে হবে। প্রথমে কৌশলগত পরিকল্পনা করতে হবে। তারপর অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। সরকারের উপদেষ্টারা যে কাজ করছেন, শিক্ষার্থীরা তাঁদের পরামর্শ দিতে পারেন।
সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, এখন তাঁদের লক্ষ্য জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করা। দীর্ঘ সময় ধরে দেশে গণতন্ত্র নেই। চাইলেও এখনই গণতন্ত্র ফেরানো যাবে না। তার আগে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলেন, এখনো পুলিশ প্রশাসন থেকে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নিয়ে খেলা হচ্ছে। তিনি শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি না করার আহ্বান জানান।
সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. মাসদার হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে ‘জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বলতে কিছু নেই। শুধু আইন থাকলেই হবে না, ব্যক্তিদের বদলাতে হবে। আইনকানুন, সংবিধান এগুলো শুধু কাগজে। মানুষের কল্যাণে সংবিধান ও আইন সংস্কার করার পরামর্শ দেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ বলেন, উচ্চ আদালতে এত দিন নিয়োগ হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। আগে যে গুম-খুন হয়েছে, সেসব নিয়ে বিচার বিভাগ থেকে একটা রুল দেওয়া হলে এসব বন্ধ হতো। তিনি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। তাঁর মতে এতে সংসদে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে।
মানবাধিকারকর্মী নুর খান বলেন, গত ১৫ বছর দেশ দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রত্যেকেই কমবেশি নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল যে এককভাবে কারও পক্ষে প্রতিবাদ করার সুযোগ ছিল না। তিনি নির্বাচনপদ্ধতি সংস্কার করার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। এটি করলে সন্ত্রাস কমবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সুপরিকল্পিতভাবে আজকের জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের গুটি চালা এখনো বন্ধ হয়নি। এম আবদুল্লাহর দাবি, এখন দেশে গণমাধ্যম বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। সবাই সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছে। যারা চেষ্টা করেছে, তাদের করুণ পরিণতি হয়েছে। এখন টেলিভিশনগুলো রূপ বদল করেছে। আবার যে তারা রূপ বদল করবে না, তা কে বলতে পারে?
মতবিনিময় সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নাবিকের সহসভাপতি বুরহান উদ্দিন ফয়সল। তিনি সেখানে পাঁচটি দাবি জানান। এর মধ্যে আছে—মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিলুপ্তি, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) আমূল সংস্কার ও পুলিশের সংস্কার; ‘আওয়ামী ফ্যাসিজমের’ সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা; বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন জনবান্ধব সংবিধান প্রণয়ন; ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নতুন বিচারক নিয়োগ, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন নাবিকের সভাপতি শিহাব উদ্দিন খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক জেলা জজ ফিরোজ আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, কর্নেল (অব.) আবদুল হক প্রমুখ। সুত্রঃ প্রথম আলো