উপহাস সঙ্গী করে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন গাজীপুরের সবুজ
রফিক সরকার, গাজীপুর: ঠাট্টা বিদ্রুপকে মাড়িয়ে নিজ সংকল্পে ভর করে তিনিই এখন হাজারো মানুষের মডেল।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর পশ্চিম পাড়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সবুজের বাগানে ঝুলে আছে রসে ভরা ছোট্ট মিষ্টি ফল আঙুর। আঙুর চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তরুণ ওই কৃষক।
জমির মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুর ফল। দু'পাশে সারি সারি গাছে ধরেছে আঙুর, মাথার উপর বাঁশের মাচায় ঝুলছে সবুজ আঙুর। একেক থোকায় শ-খানেক আঙুর। তা দেখতে যেমন মানুষ ভিড় করছেন, তেমনই নিচ্ছেন পরামর্শ। এছাড়া চারা সংগ্রহও করতেও ডাক পড়ে সফল এই কৃষকের।
এ অঞ্চলের মাটিতে আঙুর চাষ করতে দেখে একসময় যারা সবুজকে নিয়ে উপহাস করেছিলেন, এখন তারাই তার গুণগান গাইছেন। তিনি জানালেন, আঙুর চাষ নিয়ে ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও দেখেন। এরপর উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২৩ সালে প্রথমবার ঝিনাইদহের মহেশপুরের জগিহুদা গ্রামের আব্দুর রশিদের নিকট থেকে প্রতি পিস ৫৫০ টাকায় ভারতীয় সুপার সনিকা জাতের ২৫টি চারা কিনে আনেন। শুরু করেন আঙুর চাষ, তবে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি।
অনেক পরিশ্রমের পর মেলে কাঙ্খিত সাফল্য। রোপণের এগারো মাসের মধ্যে গাছে ফল আসা শুরু করে। আঙুর চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও করছেন সবুজ। তার আঙুরের বাম্পার ফলন দেখে আশপাশের কৃষকরাও ভীষণ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় বিভিন্ন নার্সারি ও ব্যক্তি তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে আসছে।
সবুজের প্রতিটি আঙুর কলম চারার দাম ২০০ টাকা।
সবুজ আরো জানালেন, প্রথমবার ১১ মাসের মাথায় গাছগুলোয় আঙুর ধরেছে এবং ৩ থেকে ৪ শত কেজি ফল পাওয়ার আশা করছেন। গাছে প্রচুর পরিমাণ ফল হয়েছে। এ আঙুর গাছে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। আঙুর গাছ ৮ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়েছে। এ গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে প্রতিটি গর্তে পাঁচ কেজি বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করেছেন। ৩ ফুট গর্ত করে ইটের গুঁড়া, মোটা বালু ও জৈব সার মাটির সঙ্গে মিশ্রণ করে দিয়েছেন। প্রতিটি গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করেছেন, যাতে পানি না জমে। আঙুর গাছ যাতে দ্রুত লম্বা হতে পারে তাই বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করেছেন। ফলে ঝড়-বৃষ্টি এলে গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে।
কৃষক সবুজ নিজের আঙুর বাগানকে উপজেলার একমাত্র বাগান দাবি করে আরো বলেন, ‘আশা করি এ বছর ভালো ফল পাবো। সাধারণত ৮০-৮৫ দিনে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। এখন যে ফল দেখছেন, তা আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হবে। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো, এ চাষ যখন শুরু করি, তখন আশপাশের মানুষ বিভিন্নভাবে উপহাস করতে থাকে। অনেকে পাগলও বলেন। তিনি বলেন, ‘দোকানে তো বসতেই পারতাম না। এখন আমার আনন্দ ধরে না। প্রতিদিন আঙুর দেখার জন্য অনেকে সাক্ষাৎ করতে আসে। আশা করি এ বছর অনেক লাভবান হতে পারবো। কোনো মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। এখন স্থানীয় কৃষি অফিসসহ সব সময় মানুষ পাশে থাকছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে এখন আর তেমন বেশি খরচ নেই।'
স্থানীয়রা জানান, আঙুর বাগান নিয়ে সবুজ প্রচুর খাটা-খাটুনি করেন। প্রচণ্ড খরার রাতেও বাগানে ২ ঘণ্টা পানি দেওয়ার কাজ করেন। সবুজ একাই বাগানে কাজ করতেন। তার স্ত্রী তাকে মাঝে মধ্যে সহযোগিতা করেন। আঙুর বাগান করে এবার লাভবান বলেও জানান এলাকাবাসী।
শ্রীপুর উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘গত বছর তিনি ২৫টি চারা দিয়ে আঙুর চাষ শুরু করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। আশাকরি তার হাত ধরেই এই অঞ্চলে আঙ্গুরের বানিজ্যিক চাষ শুরু হবে।
