বারোমাসি লেবু চাষে নেতৃত্বের আসনে সোহান
গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের মো. মোনাব্বরের ছেলে সোহানের কথা। পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিশিয়ান। ছোট থেকে প্রতিবেশী এক মামার কাছে এই ইলেকট্রিক কাজ তিনি রপ্ত করেছেন। এখন সে পুরো দমে একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তবে কৃষি তাঁর শখের জায়গা। শখের বসেই করেছেন বারোমাসি লেবু বাগান। এখন তিনি সফল একজন লেব চাষি। তাকে দেখে এগিয়ে আসছে আশাপাশের অন্য বেকার যুবকরাও।
কথা সোহানের সাথে। তিনি বলেন, আমি যার কাছে ইলেকট্রিক কাজ শিখতাম তার সাড়ে ৮শ টাকা মজুরী বাকী ছিল। তিনিও কাজের পাশাপাশি বারোমাসি বিভিন্ন জাতের লেবু চাষ করতেন। আমার কাজের মজুরী বাদ বাকী টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আমি পাওনা টাকার পরিবর্তে ওই পরিমান ২০টি লেবু চারা দিতে বলি। তিনি আমাকে ৩টি জাতের ২০টি লেবু চারা দিয়ে দেন। সেটা ২০১৭ সালের কথা। পরে আমি স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে ৩টি জাতের ২০টি বারোমাসি লেবু চারা নিয়ে ৫ শতক জমিতে লেবু চাষ শুরু করি। এখন আমার বাগানে আছে ৯ জাতের ৫০টিরও বেশি বারোমাসি লেবু গাছ। বারোমাসি লেবু ছাড়া যেসব লেবু চারা আমার বাগানে ছিল আমি সেগুলো কেটে ফেলেছি। এখন আমার বাগানে শুধু বারোমাসি লেবুর বিভিন্ন জাতের গাছ রয়েছে। অসময়ে লেবু বিক্রির পাশাপাশি লেবুর চারা বিক্রি করে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভাল আছি। আমার বাড়ির ও গ্রামের আশপাশের প্রতিবেশী ও বেকার যুবকরাও আমার কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে লেবু চাষ শুরু করেছে।
সোহান আরো বলেন, ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তখন প্রতিটি লেবু ৭ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করি। ওই ৩ মাসে আমার লেবু বাগানের লেবু বিক্রি করে ভালো টাকা আয় হয়। তাছাড়া অফ সিজনে এক হালি লেবু ৩/৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি লেবু কাটিং বিক্রি করেও ভালো আয় হয়।
সোহান বলেন, বাগানে এসে পাইকাররা নগদ টাকায় লেবু কিনে নিয়ে যায়। তারা এ লেবু স্থানীয় বাজারে এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। আমার বাগানের লেবুর ফ্লেভার ভালো। কিছু কিছু লেবুর জাতে কোন বিঁচি নেই। এছাড়া এ লেবুতে প্রচুর রস আছে। লেবু সালাদ ও শরবতে বেশি ব্যবহৃত হয়। এ কারণে বাজারে আমার লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লেবুর বাগান করে আমি লাভবান হয়েছি।
জানা গেছে, কলম্বো, কাগজি, হাইব্রিড কাগজি, গোল কাগজি, সিডলেস, চায়না থ্রী, গন্ধরাজ, জারা ও এলাচি জাতের বারমাসী লেবু চাষে বাজিমাত করেছেন সোহান। প্রতিদিন পাইকাররা তার বাগান থেকে বিভিন্ন জাতের লেবু কিনে নিয়ে যায়। এ লেবু গাজীপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। এছাড়া মাঝে মধ্যে তাঁর বাগানের মধ্য প্রচ্যের বিভিন্ন দেশেও পার্সেল যায়। এ লেবু ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িতরাও ভালো টাকা আয় করছেন।
ষাটোর্ধ শিক্ষক মিজানুর রহমান মোড়ল বলেন, সোহান যে বারোমাসি লেবু চাষ করে সেটা অফ সিজনে প্রচুর দাম থাকে। এছাড়া সিজনেও ভালো বিক্রি হয়। এ লেবুতে প্রচুর ঘ্রান ও রস আছে। তার এ লেবু চাষ দেখে আশপাশের বেকার যুবকরাও এগিয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
পচিশোর্ধ সৌদি ফেরৎ শাহিন মিয়া বলেন, আমি সাড়ে ৪ বছর সৌদি আবরে ছিলাম। এখন দেশে ফিরে এসেছি আর যাবো না। সোহান ভাইয়ের লেবু বাগানের কথা শুনে দেখতে আসলাম। আমিও একটি লেবু বাগান করতে আগ্রহী। সোহান ভাইয়ের কাছ থেকে তিন জাতের কিছু লেবু চারা নিয়ে এক একর জমিতে লেবু চাষ শুরু করবো। লেবু বাগান করতে চারা ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করবেন বলে সোহান আমাকে কথা দিয়েছে।
চলিশোর্ধ প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, সোহান একজন সফল কৃষক। সে ৮/১০ জাতের লেবু চাষ করে। প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আবার প্রবাসে যাওয়ার সময় সোহানের কাছ থেকে লেবু কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় পাইকাররা তার বাড়ি থেকে এসে নিয়ে যায়।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, সোহান আমাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় লেবু বাগান করেছেন। ৮ বছর আগে ৩ জাতের বারোমাসি ৩ জাতের লেবু চাষ শুরু করেন। এখন তিনি একজন সফ লেবু চাষি। আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছি। সোহানের লেবু বাগান থেকে প্রচুর আয় হচ্ছে। তার দেখাদেখি অনেকেই এখন লাভজনক এ বারোমাসি লেবুর চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।