আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল সূচনার দিন। এদিন পৃথিবীর মানচিত্রে যুক্ত হয়েছিল নতুন একটি নাম- বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের এইদিনে স্বাধীনতার ঘোষণায় উদ্দীপ্ত হয়ে মুক্তির লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল মুক্তিকামী জনতা। স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা হয়েছিল এদিন। যাদের ত্যাগ আর রক্তে অর্জিত এই স্বাধীন ভূ-খণ্ড সেই বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন আজ। স্বাধীনতার আনন্দে সমৃদ্ধির শপথে মুষ্টিবদ্ধ হওয়ার দিন। আজ সারা দেশে নানা আয়োজনে পালিত হবে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। পুরো জাতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের। শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি স্মরণ করবে স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও রঙিন পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে।
দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।
স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন।
২৬শে মার্চ ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের পবিত্র কর্তব্য। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের দর্শনে বিশ্বাসী। সাধারণ মানুষের জীবনমান এবং দেশের উন্নয়নে আমরা আশু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে এবং প্রবাসে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশি নাগরিককে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে দেয়া বাণীতে বলেছেন, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন অগ্রগতি আমরা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি। এ কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা এবং জোরালো সমর্থন অব্যাহত রয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অপারেশন সার্চলাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল- দীর্ঘ ৯ মাসে মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে দামাল বাঙালি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার যুদ্ধ। এর আগে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। সর্বকালের সেরা এই ভাষণ এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। সূত্রঃ মানবজমিন