‘স্ট্রাকচারাল সমস্যায়’ ইসলামী ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মতো অন্য ব্যাংকগুলোরও একই সমস্যা ছিল। কিন্তু, তাদের পলিসিগত নানান সুবিধা থাকায় তারা ওভারকাম করতে পেরেছে। ইসলামী ব্যাংকগুলো নিয়মিত ট্রেজারি বিল, বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে না, এবং এজন্য মূলত ঋণ প্রদানের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু, অন্যান্য তফসিলি ব্যাংগুলোর নানান রকম উপায় রয়েছে, যেখান থেকে তারা সুবিধা নিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত (স্ট্রাকচারাল) সমস্যার কারণে তাদের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।
আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মতো অন্য ব্যাংকগুলোরও একই সমস্যা ছিল। কিন্তু, তাদের পলিসিগত নানান সুবিধা থাকায় তারা ওভারকাম করতে পেরেছে। ইসলামী ব্যাংকগুলো নিয়মিত ট্রেজারি বিল, বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে না, এবং এজন্য মূলত ঋণ প্রদানের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু, অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর নানান রকম উপায় রয়েছে, যেখান থেকে তারা সুবিধা নিতে পারে।
তবে বিভিন্ন ধরনের নীতি সহায়তা পেয়ে ইসলামী ব্যাংকগুলো বর্তমানে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকসহ তারল্য সংকটে থাকা সাত ব্যাংককে ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে আমানতের ১৩ শতাংশ অর্থ স্ট্যাটিউটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) হিসাবে রাখতে হয়। তার এর বিপরীতে বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমেও মুনাফা করতে পারে।
তবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এসএলআর রাখতে হয় মাত্র ৫.৫ শতাংশ। তাদের এই অর্থ বন্ডে বিনিয়োগ করার তেমন টুলস নেই। সুকুক বন্ড নামে একটি টুলস রয়েছে, যাতে খুবই কম পরিমাণে বিনিয়োগ করতে পারে।
ইসলামী ছাড়া সাধারণ তফসিলি ব্যাংগুলো তারল্য সংকটে পড়লে বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সুবিধা নিতে পারে। গভর্নর বলেন, এ ধরণের সুবিধা ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে।
"তাই ইসলামী ব্যাংকগুলোর প্রায় পুরো অর্থ ঋণ বাবদ বিনিয়োগ করতে হয়। সংকটে আমানতকারীরা চাইলেই বিনিয়োগ তুলে এনে তাঁদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না"- যোগ করেন তিনি।
ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে কোনো ভয়ভীতির কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কিনা– সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, "আমার চেয়ার হারানোর ভয় নেই। আমি (অর্থ মন্ত্রণালয়ের) সচিব ছিলাম, এক বছরের বেশি সময় চাকরি করেছি। এখন গভর্নর হয়েছি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে। আমি চাইলে চাকরি ছেড়ে দিতে পারব।"
এসময় আর্থিক খাতের দুর্বলতার বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা আগেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করেছিলাম। দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি, হবেও না। তবে ওই দুর্বল ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগে। তারা খারাপের দিকে যায়নি, আর দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে।"
আজ মুদ্রানীতি প্রকাশের সময় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান গত এক বছরে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য কমার চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের জুনে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১৫ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, ২০২৩ এর জুনে এসে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৭১ কোটি টাকায়। নভেম্বরে যা আরো কমে ১৮৩ কোটি টাকায় নেমে আসে।