২০২৫ নাগাদ দ্বিগুণ হয়ে ১৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে নন-কটন পোশাক রপ্তানি: গবেষণা
'আমাদের ক্রেতা আছে, বাজার তৈরি আছে এবং বিদ্যমান সেটআপে এই টেক্সটাইল তৈরি করার সুযোগ আছে। কিন্তু সঠিক নীতির অভাবে আমরা এই বিশাল বাজার ধরতে পারছি না।'
বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা গেলে কৃত্রিম তন্তু বা ম্যান-মেইড ফাইবারসহ দেশের নন-কটন পোশাক রপ্তানি বর্তমানের সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে ১৯ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বৈশ্বিক মার্কেট শেয়ার এবং দেশের রপ্তানিকৃত ২০ ধরনের নন-কটন পোশাক পণ্যের রপ্তানির সম্ভাব্য অনুমানের ভিত্তিতে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণায় ফাইবার নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন, সমস্ত ফাইবারের শুল্কমুক্ত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা, কম খরচের একটি সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ তহবিল প্রতিষ্ঠা এবং ম্যান-মেইড ফাইবারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেওয়া হয়।
বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)-এর সহযোগিতায় ইআরডি গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
'এক্সপান্ডিং ম্যান-মেইড ফাইবার (এমএমএফ) অ্যাপারেল এক্সপোর্ট: আ স্ট্র্যাটেজি ফর আপস্কেলিং দ্য গার্মেন্ট সেক্টর' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হয়।
'বৈশ্বিক বাজারে তুলার চেয়ে কৃত্রিম তন্তুর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এ বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো তুলনামূলকভাবে কম। এ খাতে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা রয়েছে, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে,' দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক।
'এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাঁচামাল সহজলভ্য করা, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং আর্থিক ও নীতি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন,' বলেন তিনি।
স্থানীয় উদ্যোক্তারাও ইআরডি'র গবেষণায় উল্লিখিত সম্ভাব্যতার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
এনজেড ডিওয়াই ফ্ল্যাক্স স্পিনিং লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালেউদ জামান খান টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ ম্যান-মেইড ফাইবার আমদানি। আমাদেরকে যদি তুলার মতো এর কাঁচামাল শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ক্রেতা আছে, বাজার তৈরি আছে এবং বিদ্যমান সেটআপে এই টেক্সটাইল তৈরি করার সুযোগ আছে। কিন্তু সঠিক নীতির অভাবে আমরা এই বিশাল বাজার ধরতে পারছি না।'
যেসব চ্যালেঞ্জ
ইআরডি গবেষণায় শুল্কমুক্ত কাঁচামালের অভাব, কাস্টম ছাড়পত্রে বিলম্ব, ডিউটি-ড্রব্যাকের জটিল পদ্ধতি, অপর্যাপ্ত স্বল্পমেয়াদী অর্থায়ন সহায়তা, অপর্যাপ্ত এফডিআই প্রবাহ এবং ফাইবার নিরাপত্তা কৌশলের অনুপস্থিতিকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে নন-কটন পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনার জন্য এগুলোর সমাধান খোঁজার কথা বলা হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের অভাব, শীর্ষ ও মধ্যম স্তরের ব্যবস্থাপক পদে দক্ষতার পার্থক্য, দক্ষ কর্মীর অভাব, সীমিত গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম, কমপাইলেন্স ও সার্টিফিকেশেন চর্চার স্বল্পতা অব্যবহৃত সম্ভাবনার খাত পর্যন্ত পৌঁছাতে বাধা হিসাবে কাজ করছে।
গবেষণাপত্রের অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, যেখানে কটন বা কটন টেক্সটাইল আমদানিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না, সেখানে কৃত্রিম তন্তুর কাঁচামাল আমদানিতে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ককর দিতে হয়। রপ্তানির পরে এই শুল্ক ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও জটিলতা, বাড়তি খরচের কারণে উদ্যোক্তারা এতে নিরুৎসাহিত হন।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের মূল্য সংযোজন বাড়াতে হলে অবশ্যই কৃত্রিম তন্তুতে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।'
তিনি উল্লেখ করেন, 'ফ্ল্যাক্স ফাইবার সুতার মূল্য প্রতি কেজি ১৮ ডলার, যেখানে তুলা থেকে তৈরি সুতার মূল্য প্রতি কেজি তিন ডলার। তাই আমাদের বৈচিত্র্য আনতে হবে। সেজন্য ফ্ল্যাক্স ফাইবারেও তুলার ন্যায় আমাদেরকে সব ধরনের শুল্ক এবং কর উঠিয়ে দিতে হবে।'
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির অন্যতম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহিল রাকিব বলেন, 'আমরা এই গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমাদের সামনে সুযোগ রয়েছে, কিন্তু সেগুলোকে পুঁজি করে কাজে লাগাতে দরকার নীতিগত সহায়তা।'
নন-কটন পোশাকের মধ্যে রয়েছে ওয়েস্টকোট, টি-শার্ট, উইন্ড জ্যাকেট, ব্রেসিয়ার, নন-ওভেন পোশাক, ট্রাউজার, সিন্থেটিক পোশাক, শার্ট, ওভারকোট, ট্র্যাকসুট, সম্পূর্ণ বা হাঁটুসমান দৈর্ঘ্যের হোসিয়ারি ও মোজা, নারীদের জন্য রাবারাইজড পোশাক, নন-নিটেড সিন্থেটিক কাপড় ইত্যাদি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে দেশের ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের ২৯ শতাংশ এসেছে নন-কটন পোশাক থেকে।
ইআরডি'র গবেষণা অনুসারে, ২০২১ সালে ৫০৫ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক পোশাকের বাজারের ৫৪ শতাংশ নন-কটন পোশাকের দখলে ছিল।Source: tbnews.net