হাঁটা এমন একটি অভ্যাস যা সবার জন্যই উপকারী- এমনকি যদি আপনার বাত বা জয়েন্টে ব্যথা থাকে তবুও হাঁটা উপকার এনে দিতে পারে। এটি বাতের উপসর্গ কমাতে, জয়েন্টকে মজবুত রাখতে এবং শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো, হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও হাঁটার জুড়ি নেই।
ছোট-বড়, যেকোনো বয়স ও ফিটনেস লেভেলের মানুষের জন্যই হাঁটা নিরাপদ ও কার্যকর। এটি কিছু রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং আপনার আয়ু বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে।
সবচেয়ে ভালো দিক হলো হাঁটার জন্য কোনো আলাদা খরচ নেই। শুধু একটি আরামদায়ক ও মজবুত ওয়াকিং জুতা পরে যেকোনো সময় বেরিয়ে পড়লেই হবে।
এখানে হাঁটার ১০টি উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
ক্যালোরি বার্ন করে
হাঁটা ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তবে তা নির্ভর করবে আপনার হাঁটার গতি, কত দূর হাঁটলেন, উঁচু-নিচু ঢাল (এতে বেশি ক্যালোরি বার্ন হয়) এবং আপনার ওজন।
হৃদযন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধি করে
হাঁটা রক্তচাপ, ওজন ও বিএমআই কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তনালীর কোষগুলোর স্বাস্থ্য ভালো রাখে। দৈনিক হাঁটার দূরত্ব ও সময় যত বাড়াবেন, হৃদরোগের ঝুঁকি তত কমবে।
ব্লাড সুগার উন্নত করে
খাওয়ার পর ছোট হাঁটা রক্তে সুগার লেভেল কমাতে পারে। দিনে হালকা হাঁটা ও দাঁড়িয়ে থাকা পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল ব্লাড সুগার উন্নত করে।
জয়েন্টের ব্যথা উপশম করে
হাঁটা জয়েন্ট লুব্রিকেট করে এবং জয়েন্টকে সাপোর্ট করে এমন মাংসপেশি শক্তিশালী করে। বাতের ব্যথা ও জড়তা কমায়, হাঁটু সুরক্ষা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
নিয়মিত হাঁটা সর্দি-কাশি ও ফ্লু এর ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম ইমিউন সিস্টেমকে সুসংহত করে।
এনার্জি বৃদ্ধি করে
ক্লান্ত লাগলে হাঁটা এনার্জি বুস্ট করতে পারে। হাঁটা শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ায় এবং এড্রিনালিন ও নরএড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়, যা স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে।
মন ভালো করে
হাঁটা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও নেতিবাচক মনোভাব কমাতে সাহায্য করে। আত্মমর্যাদা বাড়ায় এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কমায়।
আয়ু বৃদ্ধি করে
দ্রুত গতিতে হাঁটা জীবনকাল বৃদ্ধি করতে পারে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে তাছাড়া হৃদরোগ থাকা নারীদের ক্ষেত্রে দ্রুত হাঁটা মৃত্যুর ঝুঁকি ২৮% পর্যন্ত কমায়।
পায়ের পেশি টোন করে
ট্রেডমিল ইনক্লাইন, সিঁড়ি বেয়ে হাঁটা পায়ের মাংসপেশি শক্ত করে। স্কোয়াট, লাঞ্জ, লেগ কার্লের মতো ব্যায়ামের সঙ্গেও হাঁটা মিশিয়ে নিতে পারেন।
সৃজনশীলতা বাড়ায়
হাঁটা মনকে রিল্যাক্স করে এবং চিন্তাশীলতা ও সৃজনশীলতা বাড়ায়। কাজের সমস্যায় আটকে গেলে সহকর্মীদের নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মিটিং করুন।
হাঁটার সময় নিরাপত্তা
হাঁটার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। রাস্তায় হাঁটার সময় ডানে-বামে দেখে পথ চলতে হবে, ফুটপাতে হাঁটতে হবে এবং জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও হাঁটার সময় নরম জুতা পরিধান করতে হবে, ঢিলা ও আরামদায়ক কাপড় পরতে হবে, হাঁটার আগে ও পরে পানি পান করুন, রোদে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
হাঁটা সহজ, বিনামূল্যের এবং সকল বয়সের মানুষের জন্যই উপকারী। এটি আপনার হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, এনার্জি বাড়ায় এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে, মানুষিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। নিজের বয়স ও ফিটনেস লেভেল অনুযায়ী হাঁটার রুট ও দৈনিক লক্ষ্য ঠিক করুন।
মনে রাখবেন, সুস্থ জীবনের পথে সবচেয়ে সহজ প্রথম ধাপ হলো হাঁটা। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন। তবে নতুন কোনো ফিটনেস রুটিন শুরু করার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেও ভুলবেন না। Source: Dhakatribute