বান্দরবানে কালবৈশাখীতে শতাধিক বাড়ীঘর বিধ্বস্ত
আমিনুল ইসলাম খন্দকার, বান্দরবান:
বৃহস্পতিবার হঠাৎ বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে বান্দরবানের লামা পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় কয়েকশ বাড়ীঘর।
হতাহতের কোন সংবাদ পাওয়া না গেলেও কিছু গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটেছে। রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বৈদ্যভিটা এলাকায় বজ্রপাতে এক কৃষকের ৫টি ছাগল এবং পূর্ব শিলেরতুয়া এলাকায় রমজান আলী মেম্বারের খামারে ঘর চাপা পড়ে এটি ছাগল মারা গেছে।
এছাড়া গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে গাছ পড়ে সঞ্চালন লাইম ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ভেঙ্গে গিয়েছে ৩০ টির অধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। সেই সাথে তীব্র ঝড়ের কারনে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পার্বত্য বান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনবহুল শহর লামা। এই প্রতিবেদনে লেখা পর্যন্ত এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু যায়নি। বিদ্যুৎ সচল হতে আরো দুই-একদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পিডিবি লামার আবাসিক প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন।
লামা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সকালে গাছ পড়ে চকরিয়া - লামা - আলিকদম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার সংবাদ পেয়ে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছ কেটে রাস্তা থেকে সড়িয়ে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করে। সেই সময় লামা পৌরসভার মেয়র, রেড় ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীরা ও স্থানীয় মানুষজন ফায়ার সার্ভিসের কাজে সহযোগিতা করে।
লামা উপজেলার রূপসী পাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাচিং প্রু মারমা জানান, তীব্র কালবৈশাখী ঝড়ের কারনে সড়কে গাছ পড়ে লামা উপজেলার সাথে রূপসীপাাড়া ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই সাথে মানুষের বাড়ীঘরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেত খামারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। যাদের বসতবাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ হতে সহায়তা করা হবে।
লামা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড লামা মুখ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, তীব্র তাপদাহের পর রাতে ঘুমানোর সময় বৃষ্টির ফোট আর মৃদু বাতাস দেখে আনন্দে ঘুমালে শেষ রাত ৩ টার পর তীব্র বাতাসে কারনে কাঁচা ঘরের টিনের চাল উড়ে যায়, মুহুর্তেই এদিক সেদিন ছোটাছুটি করে আশ্রয় নেই। সকালে ঘড়ে গিয়ে দেখা যায় খোলা আকাশের নিচে সবকিছু, একটু দূরে পড়ে আছে ঘরের টিনের চাল।
লামা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড লাইন ঝিরি এলাকার বাসিন্দা মো: চাঁনমিয়া বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ পড়ে তার বাড়ীর চাল ভেঙ্গে গিয়েছে, জমিতে থাকা ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন।
লামা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড হরিণঝিরি এলাকায় বাসিন্দা মোঃ হাবিব বলেন, আমাদের এখনে কালবৈশাখি ঝড়ে অনেকের বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে কয়েকটি পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রূপসীপাড়া ইউনিয়নের পেঁপে চাষী মোঃ এমরান বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে সাড়ে ৫ হাজার ফলনশীল পেঁপে গাছের মধ্যে ৩ হাজার ভেঙ্গে গেছে। ২২ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, আমার ইউনিয়নে হঠাৎ কালবৈশাখি ঝড়ে আঘাতে দেড়-শতাধিক বাড়িঘর ভেঙ্গে যায়। যেখানে ২৫টি বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায় বলে তিনি দাবি করেন। এমনকি বেশকিছু দোকান-ঘরও ভেঙে যায়।
গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা জানান, তার ইউনিয়নে ছোটবড় শতাধিক ঘর আংশিক ভেঙে গেছে। এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা স্ব-স্ব ইউনিয়নের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মাহবুবুর রহমান জানান, জেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করে সহায়তা প্রদান করা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করছি। তালিকা লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুপারিশ নিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতি বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কালবৈশাখি বাতাসের প্রবল ঘূর্ণিপাকের কারণে সব কয়টি ইউনিয়নে অনেক কয়েকটি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কয়েকটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দিলে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে।