বিবিসি বাংলা: বিগত যখন বিএনপি সরকারে ছিল তখন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল, তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। সরকারে যারা ছিলেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বা সেই সময় যেভাবে দুর্নীতি হচ্ছিল বিভিন্ন জায়গায়। আপনার নিশ্চয় মনে আছে যে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তখন অনেক সমালোচনা হয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি যে আর হবে না এ বিষয়ে আপনি ভোটারদেরকে কিভাবে আশ্বস্ত করবেন?
তারেক রহমান: দেখুন আপনি যে কথাটি বললেন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ছিল সেই সময়। আমরা ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরে সরকার নির্বাচনের পর ১০ই অক্টোবর সরকার গঠন করি, সম্ভবত।
এর বোধহয় কিছুদিন পরে একটি সূচক বের হলো টিআইবির। মানে দুই তিন মাস পরে বোধহয় একটি সূচক বের হলো।
নিশ্চয়ই মাত্র নির্বাচিত একটি সরকারের পক্ষে তো ভালোমন্দ কোন কিছুই তিন মাসে করা সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই যে সূচকটি হয়েছিল সেটি তার আগে আমাদের আগে যে সরকারটি ছিল তারা যে পাঁচ বছর যা করেছে তার উপর ভিত্তি করেই সেই সূচকটি তারা তৈরি করেছে।
আপনি যদি ২০০১ থেকে ২০০৬ অর্থাৎ বিএনপি সরকার গঠন করার পরে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে যখন ক্ষমতা হ্যান্ডওভার করে দিল, আপনি যদি সেই সংস্থা টিএইবি নামক সেই সংস্থাটার রিপোর্টই যদি আপনি দেখেন তাহলে দেখবেন পর্যায়ক্রমিকভাবে, এটি কিন্তু আমার কথা না, এটি তাদের পরিসংখ্যানের কথা- পর্যায়ক্রমিকভাবে কিন্তু নেমে এসেছে।
হ্যাঁ আমি এডমিট করছি পুরাপুরি হয়তো আমরা করতে পারিনি। বাস্তবতা তো বুঝতে হবে। এটি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই এটি মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আস্তে আস্তে করতে হবে। জিনিসটি সময় লাগবে।
আমি এখন যত কথাই বলি না কেন বাস্তবতা হচ্ছে এই বিষয়টি যেহেতু সময় লাগবে আমাদেরকে কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
সেজন্যই আমি ভোটারদেরকে এতটুকু বলতে পারব, আমরা যদি সুযোগ পাই, জনগণ যদি আমাদেরকে সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমরা যাতে একটি এমন অবস্থা তৈরি করতে পারি যেখানে কিছুটা হলেও আমরা বহিঃবিশ্বে বিশ্বের অন্য দেশের সামনে কিছুটা হলেও যাতে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি।
চাঁদাবাজি, দখলের মত নানা অভিযোগ নিয়ে যা বললেন
বিবিসি বাংলা: পাঁচই আগস্টের পরে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে চাঁদাবাজি বা দখলের মত নানা অভিযোগ এসেছে। আপনাদের দল থেকে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা ঠিক, আবার একই সাথে এটাও ঠিক যে এই অভিযোগগুলো কিন্তু বারবার আসছে। তো এটা থামানো যাচ্ছে না কেন?
তারেক রহমান: আপনার প্রতি সম্মান রেখে আপনার সাথে এগ্রিও যেমন করবো, আবার এখানে অন্য একটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাইবো।
এর মধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছেন যে প্রায় ৭০০০ এর মতন আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আমরা কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এই ৭০০০ এ সবাই কিন্তু আপনি যে অভিযোগ করলেন এই অভিযোগের সাথে জড়িত নয়। এর মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে যারা অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের সাথে জড়িত। এটি গেল একটি বিষয়।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে এরকম যখন অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্ত করার পরে আমরা বেশ কিছু বিষয় পেয়েছি।
যেমন আমি দুই-একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বলি। যেমন- ধরেন দুই ভাই। কোনও একটি এলাকায় দুই ভাই আছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পত্তি সহায় সম্পত্তি নিয়ে একটি সমস্যা আছে। এক ভাই বিগত যে স্বৈরাচার পলাতক স্বৈরাচার তাদের কারো সাথে এক ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক।
তার ফলে সে সেই স্বৈরাচারের যে দোসর যার সাথে এই এক ভাইয়ের সম্পর্ক, সে তার ইনফ্লুয়েন্সটি ব্যবহার করে অন্য ভাইয়ের সম্পত্তিও জোর করে দখল করে রেখেছে। এখন পাঁচ তারিখের পরে যে ভাই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্যবহার করেছিল সেই দোসরও তো পালিয়ে গিয়েছে। তো স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাই এখন আর শেল্টার পাচ্ছে না।
তো অন্য যার সম্পত্তি জোর করে রেখে দিয়েছিল অন্য ভাইটি। সেই অন্য ভাইটি স্বাভাবিকভাবে তার হক আদায় করতে গিয়েছে বা হক বুঝে নিতে গিয়েছে। এখন এক্সিডেন্টলি বা ইনসিডেন্টলি যে ভাই এতদিনভাবে বঞ্চিত ছিল সম্পত্তি থেকে সেই ভাই বিএনপি করে। বিএনপির কোনও একজন কর্মী বা স্ট্রং সমর্থক বা নেতা যেটাই হোক। চাপিয়ে দিল অভিযোগ তুলে দিল অন্যজন যে বিএনপি দখল করতে গিয়েছে। এরকম ঘটনা আমরা প্রচুর পেয়েছি।
আবার আরেকটি আমি উদাহরণ দেই যা সত্য, যা বাস্তব। স্বৈরাচারের সময় সারা বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর নামে বিভিন্ন রকম গায়েবি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল।
আমাদের বহু নেতাকর্মী তাদের ঘর বাড়িতে থাকতে পারতো না। তাদেরকে বিভিন্নভাবে পালিয়ে থাকতে হতো। বিভিন্নভাবে সরে থাকতে হতো। এই সুযোগে স্বৈরাচার তাদের ব্যবসা বাণিজ্য দোকান-পাট ঘর বাড়ি জমি জমা পুকুর দখল করে নিয়েছিল। পাঁচ তারিখে যখন স্বৈরাচার পলাতক হয়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে- তখন স্বৈরাচারের যারা দখল করেছে তারাও সাথে সাথে পালিয়ে গিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের নিজেদের যেগুলি বৈধ সম্পত্তি, পৈত্রিক সম্পত্তি সেগুলো আবার ফিরে পেতে গিয়েছে। তখন আবার কিছু সংখ্যক লোক প্রচার করেছে যে বিএনপির লোকজন দখল করতে গিয়েছে এরকম ঘটনা প্রচুর ঘটেছে।
আপনি যেই কথাটি বললেন সেরকমও কিছু ঘটেছে। সে কারণেই আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে এখানে আমার একটি প্রশ্ন আছে, যে প্রশ্নটি আমরা পাবলিকলিও করেছি। দেখুন আমরা একটি রাজনৈতিক দল। কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটেছে যেমন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে।
যতটুকু আমরা জেনেছি, যতটুকু আমরা তদন্তের পরে পেয়েছি, যখন সত্যতা পেয়েছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু পুলিশিং করা তো আমাদের কাজ না। রাজনৈতিক দলের কাজ অবশ্যই পুলিশিং করা না।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কখনো বলিনি সরকারকে- যে অমুককে ধরতে পারবে না, তমুককে ধরতে পারবে না, এই করতে পারবে না ওই কথা। আমরা কিন্তু কখনো বলিনি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যাদের কাজ পুলিশিং করা তারা কেন তাদের কাজটি করছে না। তারা কেন তাদের কাজে ব্যর্থ এটি আমাদের প্রশ্ন।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এখানে সরকারের একটা ব্যর্থতা আছে?
তারেক রহমান: অবশ্যই। আমি তো আগেই বলছি পুলিশিং তো রাজনৈতিক দলের কাজ না পুলিশিং করার দায়িত্ব সরকারের।
বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ আমরা ধরে নিতে পারি যে, আপনারা যদি সরকার গঠন করেন সেক্ষেত্রে আপনার দলের নেতাকর্মী বা আপনার দলের নামে কোনও চাঁদাবাজি বা দখল এ ধরনের কিছু কেউ সেটা করতে পারবে না, কারণ তখন যেহেতু আপনারা সরকারে থাকবেন?
তারেক রহমান: ইয়েস, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলার কাজ করবে। বিএনপি ইনশাল্লাহ সরকার গঠন করলে আমার দলের কোন নেতাকর্মী তখনও যদি এরকম কোনও অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয় আমরা দলের অবস্থান থেকে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিব।
দল তার পক্ষে থাকবে না, দলের অবস্থান এবং দেশের আইন অনুযায়ী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা তাদের কাজ করবে, সিম্পল। এখানে দুইয়ে দুইয়ে চারের মতন ব্যাপার।
'ডাকসুর প্রভাব পড়বে না জাতীয় রাজনীতিতে'
বিবিসি বাংলা: একটু ডাকসু নির্বাচন প্রশ্নে আসি। সাম্প্রতিক সময়ে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ব্যাপক আলোচনা চলছে রাজনীতিতে এখনো। এর ফলাফলে দেখা গেছে যে বিএনপি সমর্থক ছাত্রদলের চেয়ে বেশ বড় ব্যবধানে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়েছে। আপনি কিভাবে দেখেন এই ফলাফলটাকে আসলে?
তারেক রহমান: আমি মনে করি গণতান্ত্রিক যাত্রার একটি ভালো উদ্যোগ এটি। ভালো সূচনা। এটি গেল এক নম্বর।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে যারা জয়ী হয়েছেন বা এরকম আরো ভবিষ্যতে যারা জয়ী হবেন, তাদের প্রতি শুভেচ্ছা এবং যারা ভবিষ্যতে জয়ী হবেন তাদের প্রতি অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো।
তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে দেখুন একটা অগ্রযাত্রা শুরু হলো, কিন্তু আমরা চাইছিলাম না যে কোন বিতর্কের মধ্যে এগুলা পড়ুক। আমরা আশা করব যে পরবর্তীতে যেগুলো হবে সেগুলো বিতর্কবিহীন হবে নির্বাচনগুলো।
বিবিসি বাংলা: এই নির্বাচনের ফলাফল, মানে ডাকসুর নির্বাচনের ফলাফল এটা কি জাতীয় রাজনীতিতে কোনও প্রভাব ফেলতে পারে? আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনার কি মনে হয়? আপনি কি মনে করেন সেটা?
তারেক রহমান: আমি যেটা দেখলাম বিভিন্ন মিডিয়াতে কিছু ব্যক্তি, যেমন-মান্না ভাই, ওনাকে উনি তো বোধহয় দুবার ভিপি ছিলেন। আমার থেকে অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনীতিবিদ।
আমরা যদি উনার বক্তব্য শুনে থাকি বা ধরে থাকি তাহলে তো আমি মনে করি না কোনও কারণ আছে। ছাত্র রাজনীতি ছাত্র রাজনীতির জায়গায়, জাতীয় রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির জায়গায়।
জামায়াতের সম্ভাব্য জোট নিয়ে উদ্বেগ নেই
বিবিসি বাংলা: এখন যে সক্রিয় দলগুলো আছে তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর প্রশ্নে যদি একটু আসি, যে জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে বিএনপির নেতাদের অনেক সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। গত সাম্প্রতিক সময়ে, তো জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আপনার মনোভাবটা কি আসলে?
তারেক রহমান: বিষয়টা হচ্ছে যে দেখুন বাংলাদেশের স্বীকৃত যে নিয়ম, আইন-কানুন আছে, এগুলোর ভিতরে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করে অবশ্যই করতে পারে।
বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। কাজেই বিষয়টি আমরা এভাবেই দেখতে চাই।
দেশের যে আইন কানুন আছে তার ভিতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে, অবশ্যই সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। এবং আমরা তো চাই সবাই রাজনীতি করুক। বহুদলীয় রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি।
বিবিসি বাংলা: জামায়াতে ইসলামী তো বিএনপির সাথে একসময় মিত্র ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের বিরোধী ভূমিকা নিয়ে কিন্তু বিএনপি নেতারা এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সামনে আনছেন। কিন্তু বিএনপি আবার তাদের সাথে সরকারও গঠন করেছিল একটা সময়?
তারেক রহমান: ২০২৪ সালে স্বৈরাচার যেই হত্যাগুলো করেছে দেশ স্বাধীনের পরে যখন তারা সরকার গঠন করেছিল ক্ষমতায় ছিল তখনও যে সকল লুট তারা করেছে, খুন-গুম তারা করেছে।
বিগত ১৭ বছর গুম খুন যারা করেছে, এর জবাব যেরকম তাদেরকেই দিতে হবে, ঠিক একইভাবে ৭১ সালে কোন রাজনৈতিক দল যদি তাদের কোনও বিতর্কিত ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তাদের জবাব তারাই দিবেন। ওটা তো আর আমি দিতে পারবো না। আমারটা আমি দিতে পারবো। অন্যেরটা তো আমি দিতে পারবো না।
যা বললেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে
বিবিসি বাংলা: আপনি জুলাইয়ের সময়ের কথা বলছিলেন। সে সময়ের হত্যাকাণ্ডের কথা বলছিলেন। সেই জুলাই গণভুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আপনার আপনাদের বা বিএনপির অবস্থানটা কী আসলে?
তারেক রহমান: দেখুন, আমি ১৭ বছর যাবত প্রবাস জীবনে আছি। ওয়ান ইলেভেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যেই শারীরিক নির্যাতন আমার উপরে হয়েছিল তারপরে চিকিৎসার জন্য আমি এই দেশে আসি।
আমি যখন এখানে আসি, আমার ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম ছোট ভাইকে। আমি যখন এই দেশে আসি আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যেই ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যেই ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যেই ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল।
সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙে চুড়ে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যেই সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, উনার উপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে।
আমি আমার পরিবারের যেই কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এটিকে আপনারা কাহিনী বলুন, বা সংগ্রাম বলুন যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার কাহিনী না, বা আমার পরিবারের কাহিনী না। এরকম কাহিনী বাংলাদেশের শত না, হাজার হাজার পরিবারের।
যে পরিবারের বাবা, যে পরিবারের ভাই, যে পরিবারের স্বামী তার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় মারা গিয়েছে, তা না হলে হ্যান্ডকাফ পারা অবস্থায় জেলের ভিতরে মারা গিয়েছে, সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে- এই সকল অন্যায়, এই সকল হত্যা, এই সকল নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে।
এটি প্রতিশোধের কোন বিষয় নয়। এটি ন্যায়ের কথা। এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কী মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বিবিসি বাংলা: এখানে একটা বিষয় আলোচনায় এসেছে যে যারা অপরাধী তাদের বিচার হবে। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারা- না পারার প্রশ্নে বিএনপিরও অনেক নেতা অনেক সময় বলেছেন যে কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে তারা নন। তো এখন নির্বাচনও সামনে আসছে। ফলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না সে ধরনের একটা প্রশ্নও আসছে। তো সেটা সেই জায়গাটাতে বিএনপির অবস্থানটা কী হতে পারে?
তারেক রহমান: দল হিসেবে তারা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এটা আদালতের বিষয় বলে মনে করছেন?
তারেক রহমান: দল হিসেবে যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে তাই হবে। সোজা কথায় অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে। তো সেটি ব্যক্তি হোক, সেটি দলই হোক। যারা জুলুম করেছে তাদের তো বিচার হতে হবে। সেটি ব্যক্তিও হতে পারে। সেটি দলও হতে পারে।
বিবিসি বাংলা: আপনি ব্যক্তিগতভাবে কী মনে করেন? আওয়ামী লীগের কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা উচিত নাকি, না?
তারেক রহমান: আমার মনে হয় আপনার কোনও কোনও প্রশ্নের উত্তরে আমি মনে হয় বলেছিলাম যে- আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য।
আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও আমরা বিএনপি যারা করি আমাদের রাজনৈতিক সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই- যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে- জনগণ তাদেরকে সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না।
জনগণ যদি সমর্থন না করে কোনও রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি। জনগণের সিদ্ধান্তের উপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বিচারক আমি মনে করি জনগণ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারের এটি প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বটি প্রকাশ হবে মঙ্গলবার ৭ই অক্টোবর বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইট, ফেসবুক পাতা ও ইউটিউব চ্যানেলে।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা