ঢাকা-ভোলা নৌপথে যাত্রী ভোগান্তি
মো: সাইফুল ইসলাম
ঢাকা-ভোলা, লালমোহন ও চরফ্যাশনের নৌপথে যাত্রীদের ভোগান্তি এখন নিত্য দিনে রূপ নিয়েছে। এই রুটের লঞ্চ মালিকরা এক জোট হয়ে চালু করেছে রোটেশন প্রথা। যার ফলে সাধারণ যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। ঢাকা বা দেশের যে কোন প্রান্তে যেতে হলে এ জেলার মানুষের একমাত্র উপায় নৌপথ। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ জেলার যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলেছেন ঢাকা-ভোলা, লালমোহন ও চরফ্যাশনের রুটের লঞ্চ মালিকরা।
যাত্রী সেবার নামে তারা চালু করেছেন অভিশপ্ত রোটেশন প্রথা। যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় ঢাকা-ভোলা, লালমোহন ও চরফ্যাশনের নৌপথে যাত্রীদের কাছে লঞ্চের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তখন বেশি লঞ্চ ছিল না। যা ছিল তার আকার এবং আয়তন ছিল খুবই ছোট। যার ফলে তখনকার সময় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো। তখন কেবিন, সোফা বা ডেক সবখানেই ছিল শুধু সংকট আর সংকট। কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই নৌ-রুটে যুক্ত হয়েছে শতাব্দি বাঁধন, কর্ণফুলি-১২/১৩, তাসরিফ-৩/৪, এম ভি ফারহান-৫/৬ ও এম ভি টিপু-১৩/১৪ এর মতো বিলাশবহুল ও বিশালাকৃতির লঞ্চ।
বর্তমানে এ রুটে মোট লঞ্চের সংখ্যা ৮ টি। তবে লঞ্চ সংখ্যায় বাড়লেও কমেনি যাত্রীদের দুভোর্গ। কারণ যাত্রী সংকটের খোড়া অজুহাতে রোটেশন পদ্ধতিতে ঢাকা-বেতুয়া নৌ-রুটে যাত্রী পরিবহন
করছে লঞ্চ মালিকরা।
এ রুটে ৮ লঞ্চ থাকা সত্বেও প্রতিদিন ২ টি করে ৪ টি লঞ্চ বেতুয়া থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে বেতুয়া উদ্ধেশ্যে ছেড়ে যায়। বাকি ৪ টি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাটে রোটেশনের নামে আটকে রাখা হয়। ফলে রোটেশন প্রথার কারণে প্রতিদিন লঞ্চের
একটি কেবিনের জন্য যাত্রীদের হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। কখনো প্রশাসন, কখনো সংবাদকর্মী আবার কখনোবা রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের শরনাপন্ন হতে হয় যাত্রীদের। তারপরও অতিসহজে একটি কেবিন খুঁজে পায় না কেউ। তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের পরিচিত কিছু দালাল ও লঞ্চের অসাধু কর্মকর্তা চাইলে অধিকমূল্যে একটি কেবিন বা সোফার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন অনয়াশেই।
রোটেশনের উদ্দেশ্য তিনটি- ১. যে লঞ্চটি চলবে, সেটিতে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া। ২. প্রতিযোগিতার বদলে অনেকটা একচেটিয়া ব্যবসা নিশ্চিত করে বেশি ভাড়া আদায় এবং ৩. মুনাফার হার বাড়ানো।
শুধু রোটেশন নয়, নতুন লঞ্চ নামানোর ক্ষেত্রেও মালিকেরা বাধা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নতুন কোনো মালিকের পক্ষে নির্দিষ্ট রুটে লঞ্চ নামানো কঠিন। কারণ, মালিকেরা চান না, প্রতিযোগিতা তৈরি হোক।
এর ভুক্তভোগী সাধারণ যাত্রীরা। তাঁরা বলছেন, লঞ্চমালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার অভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। গাদাগাদি করে ওঠানোয় যাত্রীসেবার মান খারাপ হয়। লঞ্চ চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, মালিকদের এই রোটেশন প্রথা ও লঞ্চে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের অজানা নয়। তাঁরা বরং জেনেশুনে সুযোগটি দেন। এর বদলে আর্থিক সুবিধা নেন। স্থানীয় সূত্রে আরও জানাযায়, দুই ঈদের সময় রোটেশন প্রথা থাকেনা। তখন লঞ্চ মালিকদের মুখে যাত্রী সেবার কথা বলা হলেও অন্তরে থাকে অধিক লাভের চিন্তা। আর এ জন্য শুরু করেন কথিত স্পেশাল সার্ভিস। সেই সুযোগে যাত্রী পরিবহনের ভাড়াও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সুযোগ সুবিধার বিন্দুমাত্র ছাঁপ না থাকলেও ধারন ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশী যাত্রী বোঝাই করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে লঞ্চগুলো চলাচল করে থাকে।
রোটেশন নামের অভিশাপ থেকে সাধারন যাত্রীদের মুক্তি দিতে এরই মধ্যে জেলার সচেতন মহল, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে। তারা তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে যাত্রী দূর্ভোগ কমাতে ঢাকা-বেতুয়া রোটেশন প্রথা বাতিলের বাদী করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবীতে দৌলতখান থানার এক বাসিন্দা বলেন,
‘যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে ঢাকা টু ভোলা লঞ্চ রোটেশন বাতিল করা হোক। দ্রুতই প্রশাসন নজর দেওয়া উচিত’।
এছাড়া তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, সাধারন মানুষের কথা বিবেচনা করে ঢাকা টু
ভোলা লঞ্চ মালিকরা এই রোটেশন প্রথা বাতিল করা উচিত। নচেত সাধারন জনগণ
নিয়ে এই রোটেশন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। রোটেশন প্রথায় যাত্রী দুর্ভোগের কথা অস্বীকার করে এমভি টিপু লঞ্চের মালিক গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ঢাকা-ভোলা রুটে দুটি লঞ্চেই ঠিকমত যাত্রী হচ্ছে না। প্রতিদিন অধিকাংশ কেবিন খালি যাচ্ছে। এছাড়া নদীতে চর পড়ে প্রতিনিয়ত লঞ্চ আটকে যায়। যারা রোটেশন প্রথা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে তারা সঠিক ও সত্য কথা বলছেন না।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ ভোলা নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন,
ঢাকা-বেতুয়া রোটেশন প্রথার বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। এ বিষয়ে কেউ
কোন অভিযোগ করেনি। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি ঢাকায় উর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে জানাবো এবং মালিক সমিতির সঙ্গে কথা করবো।