ইউক্রেনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কে এই তাতার মুসলিম
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে রুস্তম উমেরভকে মনোনীত করেছেন তিনি। রুস্তম বর্তমানে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তহবিলের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকাল রোববার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নতুন করে সাজানোর প্রয়োজন রয়েছে।’
যুদ্ধের এই সময়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া কে এই রুস্তম উমেরভ?
নির্বাসনে থাকা এক তাতার মুসলিম
রুস্তমের বয়স এখন ৪১ বছর। তিনি ক্রিমিয়ার তাতার বংশোদ্ভূত। এই তাতাররা সুন্নি মুসলমান। তাদের পূর্বপুরুষদের বসবাস ছিল ক্রিমিয়া উপদ্বীপে। ২০১৪ সালে উপদ্বীপটি ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করে নেয় রাশিয়া।
রুস্তমের পূর্বপুরুষ একসময় ক্রিমিয়ায় বসবাস করত। তবে ১৯৪৪ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্তালিনের নির্দেশে ১ লাখ ৮০ হাজার তাতারকে ক্রিমিয়া থেকে উজবেকিস্তানে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ফলে চলে যেতে হয় রুস্তমের পরিবারকেও।
উজবেকিস্তানের সমরখন্দ শহরে জন্ম রুস্তমের। পরে গত শতকের আশির দশকের শেষ ও নব্বইয়ের দশকের শুরু দিকে তাতারদের ক্রিমিয়ায় পুনর্বাসন করা হয়। তখন রুস্তম ও তাঁর পরিবার আবার ক্রিমিয়ায় ফিরে আসে।
অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করা এক বহুভাষী
রুস্তম পড়াশোনা করেছেন অভিজাত আবাসিক স্কুলে। মোট পাঁচটি ভাষায় দখল রয়েছে তাঁর। সেগুলো হলো ইউক্রেনীয়, তাতার, রুশ, তুর্কি ও ইংরেজি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ফিউচার লিডারস এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ১৯৯৮ সালে পড়ালেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় তাঁকে। এরপর তিনি ইউরোপিয়ান ইয়ুথ পার্লামেন্টে যোগ দেন।
রুস্তম তাঁর পেশাজীবন শুরু করেন বেসরকারি খাতে চাকরির মধ্য দিয়ে। ২০০৪ সালে তিনি ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় একটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন।
২০১৩ সালে রুস্তম ‘এএসটিইএম’ নামে তাঁর নিজের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান খোলেন। তিনি স্নাতক শেষ করেছেন ইকোনমিকস নিয়ে। আর স্নাতকোত্তর করেছেন ফাইন্যান্সে।
পরের বছর যখন রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে, তখন ক্রিমিয়ায় তাতারদের প্রতিনিধিত্বকারী কর্তৃপক্ষ ‘ক্রিমিয়ান তাতার মজলিশের’ নেতা মুস্তফা ঝেমিরেভের উপদেষ্টা ছিলেন এই রুস্তম।
দুর্নীতিবিরোধী আইনপ্রণেতা
২০২০ সাল থেকে ইউক্রেন সরকারের একটি টাস্কফোর্সের সদস্য রুস্তম উমেরভ। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারত্বের অবসানের কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে এই টাস্কফোর্স।
পরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রুস্তম তখন ইউক্রেনে ইউরোপপন্থী হোলোস পার্টির একজন আইনপ্রণেতা। এ সময় তিনি দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তহবিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। সরকারি এ সংস্থা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির কাজ দেখভাল করে।
রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তহবিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। সেখান থেকে সংস্থাটির ভাবমূর্তি উদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখেন রুস্তম। যুদ্ধের সময়ও তাঁর অধীনে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তহবিল রেকর্ড অগ্রগতি পেয়েছে।
দক্ষ মধ্যস্থতাকারী
রুস্তমের কাছের লোকজন তাঁকে মেধাবী মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অভিহিত করেন। গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর মার্চে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধি দল। ওই দলের সদস্য ছিলেন রুস্তম।
এ ছাড়া নানা বিষয়ে মধ্যস্থতায় বড় ভূমিকা রেখেছেন রুস্তম। কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের শস্যবাহী জাহাজ চলাচল জারি রাখতে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বন্দী বিনিময়ের আলোচনায়ও ভূমিকা রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া গত বছর মারিউপোল শহরে আটকে পড়া ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর আধা সামরিক দল আজভ ব্যাটালিয়নের যোদ্ধাদের মুক্তি নিয়েও দরকষাকষি করেছিলেন রুস্তম।
গত মে মাসে সৌদি আরব সফর করেছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর সঙ্গে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলে ছিলেন রুস্তম। এর আগে মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন জেলেনস্কির স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কি। দেশটিতে তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে ছিল রুস্তমের নামও। সুত্রঃ প্রথম আলো