গবির সমাবর্তন নিয়ে চক্রান্তের অভিযোগ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি: দীর্ঘ দশ বছর পর সাভারে অবস্থিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) চতুর্থ সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। ইতোমধ্যে সমাবর্তনের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির অনুমতি ও তারিখ নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে ইউজিসি থেকে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। রাষ্ট্রপতির তারিখ নির্ধারিত হলে তা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
এদিকে, সমাবর্তনের তারিখ নির্ধারণ না করাকে ইস্যু বানিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে বানচালের অভিযোগ উঠেছে সাবেক তিন শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সমাবর্তনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অভিযোগ তুলে গবির বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক কয়েস আহমেদ ঢাকা মর্নিং নিউজকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ইর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্ন ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সমাববর্তন বানচালের চেষ্টা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই-তিনজন শিক্ষক কর্মকর্তা। তারা গণ বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিভিন্ন অসদাচরণসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে পদুচ্যত। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সমাবর্তনের তারিখ নির্ধারণ না করায় যারা বলে বেড়াচ্ছেন যে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে না তারা আসলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের নিয়মনীতি জানেন না। তারা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের এই ইস্যুতে ব্যবহার করছেন। যা অতন্ত্য লজ্জাকর।'
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত ১ লা মে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন আয়োজনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর সেমিস্টার পর্যন্ত স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ জানুয়ারি সেশন পর্যন্ত পেশাগত এমবিবিএস অর্জন ডিগ্রি অর্জনকারী এবং ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ নভেম্বর সেশন পর্যন্ত পেশাগত বিডিএস ডিগ্রি অর্জনকারীরা এ সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন। যেসব শিক্ষার্থী গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক/স্নাতকোত্তর/এমবিবিএস/বিডিএস অর্জন করেছেন তাদেরকে convocation.gonouniversity.edu.bd এই লিঙ্কের মাধ্যমে আগামী ২ জুনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। এর আগে ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সমাবর্তনের রেজিষ্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় একক ডিগ্রির জন্য ৬ হাজার টাকা ও দুইটি ডিগ্রির জন্য ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সমাবর্তন আয়োজনকে ঘিরে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে।
গবি বাংলা বিভাগের শিক্ষক কয়েস আহমেদ জানান, দুই-তিনজন শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন গবির সাবেক দুই ছাত্রসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। তারা প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে রেজিস্ট্রেশন না করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন যা আমরা অবহিত। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। আশা করছি, ভুল তথ্য প্রচারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঢাকা মর্নিং নিউজকে বলেন, 'এ অপপ্রচারের মূল উদ্দেশ্য সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী কমিয়ে দেওয়া এবং সমাবর্তনকে ব্যর্থ আয়োজন হিসেবে প্রমান করা। সমাবর্তন মূলত শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান। কিন্তু অপপ্রচারকারীরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের ব্যক্তিস্বার্থকে চরিতার্থ করতে উঠে পড়ে লেগেছে।'
এ বিষয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস তাসাদ্দেক আহমেদ বলেন, 'দীর্ঘ এক বছর চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে সমাবর্তন আয়োজনের প্রস্তুতির নির্দেশনা পেয়েছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমতি ও তারিখ নির্ধারণের জন্য ইতিমধ্যে ইউজিসি থেকে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মূল সনদপত্র পাবেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, 'তারিখ নির্ধারণ আমাদের হাতে নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সময় দেওয়ার পর তারিখ জানাতে পারবো। যেহেতু আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে, তাই সব কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। তারিখের জন্য বসে থাকলে, পরে পর্যাপ্ত সময় না-ও পেতে পারি। শিক্ষার্থীদের ১০ বছরের অপেক্ষার অবসান করে সুন্দর একটি সমাবর্তন উপহার দিতে চাই। এজন্য আমরা সকলেই কাজ করছি। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখানে কোনো স্বচ্ছতার অভাব হবে না।'
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ৩য় সমাবর্তনে একক ডিগ্রির জন্য ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।