একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হওয়ার পক্ষে বিএনপি

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হওয়ার পক্ষে বিএনপি

প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা একব্যক্তি হতে পারবেনএই বিষয়ে সব দল মোটামুটি একমত বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ১৭তম দিনের আলোচনার শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানে গণতন্ত্র আছে, সেখানে দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে কোনও বাধা নেই। এটা ঠিক করবে যারা সংসদীয় পার্টি বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারা। আর একটা পার্টির সংসদ সদস্যদের মধ্যে - জন বা আরও বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য থাকে। এখন কেউ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েক দিন বা কয়েক মাস পর (প্রধানমন্ত্রী পদে) নাও থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি দলীয়প্রধান থেকে গেলেন, আরেকজন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। সুতরাং এখানে বাধ্যবাধকতা না থাকাই ভালো।

তিনি বলেনতত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে সদস্যদের সার্চ কমিটির প্রস্তাব এসেছে। সেখানে সরকারি দলের প্রধানমন্ত্রী স্পিকার আর বিরোধী দল থেকে বিরোধী দলীয় নেতা, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) আর সংসদের তৃতীয় বৃহত্তর দলের একজন থাকবেন। তারা বাছাই করবেন। এই কমিটির সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলের কাছ থেকে নাম আহ্বান করবে। সেখানে সরকারি বিরোধী দল তো নাম দেবেনই। এর বাইরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নাম দেবেন। সেই নামগুলো বাছাই করে সার্চ কমিটি যদি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে ঐকমত্য হতে পারলে ভালো, না পারলে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে যাবে।

বিএনপির এই নেতা জানান, দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে সার্চ কমিটির কাছে সরকারি দল বিরোধী দল জন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। আর তৃতীয় দল জনের নাম প্রস্তাব করবে। এই ১২ জনের মধ্যে থেকে কে প্রধান উপদেষ্টা হবেন, বাছাই কমিটি চূড়ান্ত করে যদি ঐকমত্যে আসতে পারলে ভালো। এখানেও যদি ঐকমত্যে আসতে না পারে তাহলে ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রস্তাব এসেছে র্যাঙ্ক চয়েজ ভোটিংয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা নিয়োগ করার। যদিও এই বিষয়তে আজকের বৈঠকে ঐকমত্য হয়নি রাজনৈতিক দলগুলোর।

বাছাই কমিটির মাধ্যমে ঐকমত্যে আসতে পারলে ভালো উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেনআর সেটি না হলে আমাদের প্রস্তাবে সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান আছে সেটা অনুসরণ করা হবে। তবে, সেখানে রাষ্ট্রপতির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের যে বিধান আছে সেটা বাতিল করার কথা বলেছি। সেটা এই পর্যায়ে আছে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন বাছাই কমিটি এয়োদশ সংশোধনী মাঝখানে অন্য কোনও বিধান বের করা যা কিনা সেটা খুঁজে দেখছে।

 বিএনপির পক্ষে থেকে আরও বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে সংবিধানের ১২৩() ধারা ৭২() ধারা সংশোধনের প্রয়োজন হবে। প্রথমটি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হলে আগের সংসদের সদস্যদের বহাল থাকার বিতর্কিত বিধান সম্পর্কিত, আর দ্বিতীয়টি অধিবেশন আহ্বান নিয়ে ৬০ দিনের সময়সীমার সাথে সম্পর্কিত। বিএনপির মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে এসব অনুচ্ছেদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধনের প্রয়োজন হবে, এবং এতে কোনও রাজনৈতিক বিতর্ক নেই।

 আলোচনার শেষদিকে সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে আলোচনায় বিএনপি অংশ নেয়নি।

সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি বিষয়ে আজ কিছু বলছি না। আগামীকালের আলোচনায় অংশ নিয়ে আমরা মতামত দেবো।

সংলাপে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বসম্মতি সবসময় সহজ হয় না। তবে, ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সময় যেভাবে তিনদলীয় ঐকমত্য হয়েছিল, তা সফল হয়েছিল। সুতরাং আলোচনা রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে আমরা আবারও একমত হতে পারি।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বিভক্তি নয়, ঐকমত্য। বিভক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত হলে ভবিষ্যতে প্রশ্ন থেকেই যাবে।