রাতের ভোটের কুবুদ্ধি সাবেক আইজিপি পাটোয়ারীর
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে রাতে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কুবুদ্ধি দিয়েছিলেন পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় সাবেক আরেক আইজিপি ও সাবেক র্যাব ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মামুন জবানবন্দিতে জানান, সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর পরামর্শ মতোই শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, যেন ভোটের আগের দিন রাতেই ব্যালট বাক্সের ৫০ শতাংশ নৌকায় সিল মেরে ভর্তি করা হয়।
মামুন তার জবানবন্দিতে জানান, গুম, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের সিরিয়াস নির্দেশনা আসতো প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে। সরাসরি নির্দেশনা দিতেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এসব কার্যক্রমের অনেক কিছুই পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থেকেও তার অজানা থাকত।
তিনি বলেন, কাউকে উঠিয়ে আনা, গুম করে রাখার মতো বিষয়গুলো তারিক সিদ্দিক সরাসরি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতেন। এ ব্যাপারে পুলিশের আইজি হওয়া সত্ত্বেও আমাকে সবকিছু অবহিত করা হতো না। ব্যারিস্টার আরমানের টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স (টিএফআই) সেলে বন্দি থাকার বিষয়টিও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন মামুন।
জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজপি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে জ্বীন বলে ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কেননা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর মনে করা হতো তাকে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই জুলাই আন্দোলন দমনে ব্যবহার হয় মারণাস্ত্র, হেলিকপ্টার থেকে করা হয় গুলি। শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা সে সময়ে পুলিশ প্রধানকে সরাসরি জানান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা হতো প্রতিরাতের বৈঠকে।
মামুন বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক হতো। বৈঠকে দুজন সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ,ডিবির হারুন, র্যাবের মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ অনেকে উপস্থিত থাকতেন। মূলত এ বৈঠকেই সব পরিকল্পনা হতো।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন সে সময়কার পুলিশপ্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। বিশেষ শর্তে রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক এই আইজিপি।
