প্লাটিলেট কেন কমে যায়
ডেঙ্গুর মৌসুম এলেই প্লাটিলেটের কথা বেশি শোনা যায়। এই প্লাটিলেট কী এবং কেনই-বা কমে যায়? আমাদের শরীরে থাকা তিন ধরনের রক্তকণিকার একটি প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা। প্লাটিলেটের মূল কাজ রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা। শরীরের কোথাও কেটে গেলে দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডেঙ্গু রোগে এই প্লাটিলেট কমে যায়। তবে শুধু ডেঙ্গু নয়, আরও কিছু রোগে বা কারণে প্লাটিলেট কমতে পারে।
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণ
আমাদের শরীরে প্লাটিলেটের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে, সাধারণত প্রতি মিলিলিটার রক্তে দেড় লাখ থেকে চার লাখ থাকে। স্বাভাবিক মাত্রা থেকে এটি নিচে নেমে গেলে বা কমে গেলে মেডিকেলের ভাষায় এটিকে বলে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া।
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার প্রধান কারণ দুটি—
এক. প্লাটিলেট ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
দুই. পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হওয়া।
বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণ, যেমন ডেঙ্গু, কোভিড-১৯, হেপাটাইটিস বি-র কারণে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। এ ছাড়া কিছু ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনে অনেক সময় এ রকম হতে পারে।
কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া এবং ক্যানসার-সম্পর্কিত চিকিৎসা কেমোথেরাপির পরও প্লাটিলেট কমে যায়।
রক্তের বিভিন্ন রোগ, যেমন লিউকেমিয়া নামক ব্লাড ক্যানসার বা অন্যান্য ব্লাড ক্যানসারে প্লাটিলেট কমে যেতে দেখা যায়। অস্থিমজ্জা-সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগেও এ রকম হতে পারে।
- অতিরিক্ত মদ্যপান ও লিভারজনিত সমস্যাও প্লাটিলেট কমে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
- রোগ প্রতিরোধ-সম্পর্কিত কিছু রোগ, যেমন আইটিপিতে প্লাটিলেট ধ্বংস হয়ে যায়।
- প্রেগনেন্সির কিছু জটিল সমস্যায়ও প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।
প্লাটিলেট কমে গেলে কী হয়
প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া কোনো মেডিকেল ইমারজেন্সি নয়। অর্থাৎ প্লাটিলেট কমে যাওয়ামাত্রই রোগী রক্তক্ষরণ হয়ে হঠাৎ মারা যাবে—বিষয়টি এ রকম নয়। তবে প্লাটিলেটের মাত্রা যদি অনেক নিচে নেমে যায়, যেমন ১০ হাজারের নিচে, তখন ইন্টারনাল ব্লিডিং মানে শরীরের অভ্যন্তরে ব্রেন, কিডনি, হার্টের মধ্যে রক্তক্ষরণের ভয় থাকে।
প্লাটিলেট বাড়াতে কী খাবেন
বিটের রস উপকারি
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ
বেশ কিছু লক্ষণ দেখে প্লাটিলেট কমে যাওয়া শনাক্ত করা যেতে পারে। এর মধ্যে আছে—অল্প রক্তপাত হলে, লাল বর্ণের পিনপয়েন্ট স্পট হতে পারে। ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়ে বেগুনি রঙের চিহ্ন দেখা যায়। শরীরে কোথাও কেটে গেলে, অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত হতে পারে। মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত, প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্তপাত হতে পারে।
ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে গেলে
ডেঙ্গু রোগে প্লাটিলেট কমে যাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। এতে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর, শরীরে ডেঙ্গুর প্রভাব কমার সঙ্গে সঙ্গে প্লাটিলেটও আগের অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে। একজন চিকিৎসক নিয়মিত রক্তের পরীক্ষায় প্লাটিলেটের পরিবর্তনের ধরনের ওপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসাপদ্ধতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত নয়, এমন কোনো চিকিৎসা নেওয়া ঠিক নয়। সূত্রঃ প্রথম আলো