থমকে যাচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অদম্য মেধাবী পায়েলের জীবন

থমকে যাচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অদম্য মেধাবী পায়েলের জীবন

সালমান সাকিব, চবি: ছোট বেলায় শারিরীক সমস্যার কারণে অন্ধত্ব বরণ করে নেয় শিশু পায়েল। অন্ধত্বকে মেনে নিতে না পেরে মায়ের সাথে বিচ্ছেদ ঘটান পায়েলের বাবা। ছোট্ট বয়সেই পিতার বাড়ি ছেড়ে চলে আসে নানুর বাসায়। সাত বছর বয়সে পায়েলকে ভরণ পোষণ ও লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্যত্র মায়ের বিবাহ হয়। 

কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে মায়ের বিবাহের একমাস পরই পায়েলের উপর নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন। সেই নির্যাতনের কথা স্বীকার করতে পারতো না মায়ের কাছেও। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদের সহযোগিতায় বই এনে বাড়িতে পড়তো। 

সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর পুরোপুরি ভাবে পায়েলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্কুলের শিক্ষক, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বন্ধুর সহায়তায় এসএসসি পাশ করে সে।


সাবেক শিক্ষক আব্দুস সামাদের সহযোগিতায় বই কেনার পাশাপাশি চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় তাঁর সাথে এক নারীর পরিচয় হয়। যিনি পায়েলকে 

একটি আবাসিক মেসে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।


উচ্চমাধ্যমিকে মেধার স্বাক্ষর রেখে জিপিএ 5 পেয়ে ভর্তি যুদ্ধে জয়ী হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পায়েলের সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় নি। বর্তমানে অর্থাভাবে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন তিনি। তাই চাচ্ছেন একটি স্থায়ী সমাধান।


পায়েলের নানা জানান, 'চোখের সমস্যা দেখে পায়েলের বাবা তার মায়ের সাথে বিচ্ছেদ ঘটায়। সেই ছোটবেলায় আমি পায়েলকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। পায়েলের মাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে আমি পায়েলকে আমার কাছে রেখেছিলাম। ওকে ছোটবেলা থেকেই স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা সবকিছুই আমি করেছি। ওর বাবা ওকে কোনো ধরনের খরচ দেয়নি। ওর মায়ের উপর অনেক অন্যায় অত্যাচার করেছে ওর ফুপুরা।'

তিনি আরো জানান, 'আমি কখনো পায়েলকে ওর বাবার বাড়িতে কোন অধিকার আদায়ের জন্য পাঠাইনি। এতদিন আমার ব্যবসা চলছিল, পায়েলকে চালানো আমার জন্য কষ্ট হয়নি।

কিন্তু কয়েক বছর ধরে ব্যবসা বন্ধ হওয়া এবং আমার বয়স হওয়ায় সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমি আমার নাতনির জন্য কিছুই করতে পারছি না। কেউ যদি ওর পাশে দাঁড়ায় চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।'


নিজের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে পায়েল বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমাকে ভর্তির ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক সংগঠন উত্তরণ আমার খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আমি চোখে ভালো দেখতে না পারায় আমাকে অধিকাংশ সময় রিক্সা ব্যবহার করতে হয়। এতে রিক্সা ভাড়া প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমার কাছে 

সেরকম অর্থ না থাকায় আমি ভালোভাবে রিক্সা ব্যবহার করতে পারি না। আমি চোখে দেখতে না পারায় আমার শ্রুতি লেখক এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে গত বছর পরীক্ষায় শ্রুতি লেখক না পাওয়ায় আমি কয়েকটি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারিনি।' 


বর্তমানে পায়েল চান একটি নিরাপদ জীবন। সমাজের বিত্তশালী কেউ যদি তার দায়িত্ব নেন অথবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সরকারি বৃত্তি ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে তিনি দুঃশ্চিন্তা ছাড়া পড়াশোনা শেষ করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।