অনেকেই বলত জুতার ব্যবসা কেন
২০১৭ সালের অক্টোবর। খুব ভয়ে ভয়ে নিজের জমানো টাকা দিয়েই ব্যবসাটা শুরু করেছিলেন জান্নাত ফাতেমা হক। টিউশনি করে যে টাকা পেতেন সে টাকা জমিয়ে ছোট করে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। জান্নাত পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা পরতে পছন্দ করতেন। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল জুতার ব্যবসা করবেন। নিজের একটা জুতার ব্র্যান্ড হবে। ৩০ হাজার টাকা নিয়েই স্বপ্নের ব্যবসা শুরু।
পুরান ঢাকার এক কারিগরকে সঙ্গে নিয়ে নারীদের জন্য নিজের নকশাকৃত জুতা বানিয়ে বিক্রি করা শুরু করেন। অনলাইনে ফেসবুক পেজ খুলে তার নাম দেন—ক্ল্যাসিক কার্ভস। ভালোই চলতে থাকে ব্যবসা। এর চার-পাঁচ মাস পর বুঝতে পারেন ব্যবসা করাটা এত সহজ হবে না। অনলাইনে এত ব্যবসার মাঝে নিজের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। এর পরও জান্নাত ব্যবসা বন্ধ করেননি। নতুন আইডিয়া, সুন্দর নকশা বের করেন। কীভাবে বিক্রি বাড়ানো যায়, সবাই যেন পেজের নামটা চেনে সেটার পেছনেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেন।
যখন তার বন্ধুবান্ধব জানতে শুরু করে যে তিনি জুতার ব্যবসা শুরু করেছেন, তখন অনেকেই তাকে সমর্থন করেছেন। আবার অনেকেই বলেছেন জুতা কেন অন্য কোনো কিছুর ব্যবসা করতে। তিনি কখনো এসব কথায় কান দেননি। যেহেতু একাই সাহস করে শুরু করেছিলেন ব্যবসাটা, পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। বাসা থেকেও নানা রকমের কথার গুঞ্জন উঠেছিল, ‘পড়াশোনাটা শেষ করে বিজনেস শুরু করো। এখন বিজনেস অফ রাখো।’ কিন্তু জান্নাতের একটাই কথা ছিল, ‘যেটা আমি মন দিয়ে শুরু করেছি সেটা মাঝপথে বন্ধ করে দেব না।’
একসময় জান্নাতের মনে হলো যদি একাই এভাবে সব কাজ করতে হয় তাহলে ব্যবসাটা বড় হবে না। কোনো কিছু সময়মতো করাও যাবে না। এরপর তার ব্যবসার কাজে যুক্ত করেন আরো দুজন। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ব্যবসা। কোনো কিছুর জন্য এখন আর বাবা-মায়ের কাছে চাইতে হয় না। নিজেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। আজ ছয় বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন জান্নাত। তার স্বপ্ন ব্যবসা আরো বড় হবে। সবাই এক নামে তার ব্র্যান্ডকে চিনবে। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে জান্নাত বলেন, ‘চলার পথে অনেক বাধা আসবে, খারাপ সময় যাবে। কিন্তু থেমে থাকলে চলবে না, নিজের মতো করে এগিয়ে যেতে হবে।’ সূত্রঃ bonikbarta.net