বছরে ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়: সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, বছরে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৮১ থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। টাকা পাচার থেকেই ডলার সংকটের শুরু। তাই জরুরি ভিত্তিতে এটি রোধ করার পদক্ষেপ দরকার।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি: প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও পুষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঋণের ২২ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর রাশ টানতে হবেই। ব্যাংক কমিশন করলে ভালো, না হলে অন্তত শক্তিশালী একটা কমিটি করা উচিত বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে।
এডিপি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা হওয়ার কথা এডিপি। হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে ধনীদের করহার বাড়ানো, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের মতো প্রস্তাব সাহসী পদক্ষেপ।’
ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর ১ শতাংশ কমানো মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, কিছু পণ্যের দাম কমছে। বাজেটের পর দাম বাড়েনি। মে পর্যন্ত ১১ মাসে প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন বেড়েছে।
এবারের বাজেটে সরকার বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার এবার বাজেটের আকার কমিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে এবারের বাজেট হওয়ার কথা ছিল ৯ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। সেখানে এবার বাজেট সংকুচিত করে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থাৎ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার বাজেট সংকুচিত করা হয়েছে। টাকার সরবরাহ কমলে মূল্যস্ফীতি কমবে। এবারের বাজেটে কৃপণতা দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ঘাটতিও কমানো হয়েছে, যা খরচ কমানোর স্বার্থে করা হয়েছে। সে জন্য বলছি, এটি একটি সাহসী বাজেট। বাজেটে করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, কৃষি হচ্ছে বাংলাদেশের আসল জায়গা। কৃষি না হলে বাংলাদেশ চলবে না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কৃষিকে সামনে রেখেই কাজ করতে হবে। কেন না কৃষিই আমাদের দেশের প্রাণ।
বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট খুব কঠিন জিনিস। এবার অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বাজেটটি দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার যে বাজেটটি দিয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। এটি জনবান্ধব বাজেট। বাজেট এখনো পাশ হয়নি। তা পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে এবং করা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান বলেন, বিগত ১৫ বছরের বাজেট পর্যালোচনায় দেশজ উৎপাদন ৬ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশ কমে এসেছে। আগে আয়ু ছিল ৪২ বছর, বর্তমানে তা বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষির উৎপাদন বেড়েছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসারকালে ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যঘাটতি ছিল, বর্তমানে তা উদ্বৃত্ত রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. জিয়াকুন শি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির মহাসচিব মিজানুর রহমান কাজলসহ অনেকে। সুত্রঃ www.ittefaq.com